

জায়েদ মাহমুদ রিজন নালিতাবাড়ি প্রতিনিধিঃ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত সরকারি ঘরগুলো বছরের পর বছর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বিশেষ করে উপজেলার ভোগাইপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭০টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৪০টির দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই সেখানে নিয়মিত বসবাস না করায় সরকারি এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০২৩ সালে সীমান্তবর্তী পাঁচটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নালিতাবাড়ীর ভোগাইপাড় এলাকায় অনেক ঘর ফাঁকা পড়ে আছে, কোথাও কোথাও দরজায় তালা ঝুলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেকেই কর্মসংস্থানের খোঁজে ঢাকাসহ অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেদের নামে ঘর পেয়েও আগের বাড়িতেই বসবাস করছেন। এমনকি কিছু ঘর বিক্রির কথাও শোনা গেছে এলাকাবাসীর মুখে।
ভোগাইপাড় গ্রামের বাসিন্দা চাম্পা বেগম বলেন, “সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজের সুযোগ না থাকায় অনেকে বাইরে চলে যায়। মাঝে মাঝে শুধু এসে দেখে যায়।”
একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, “যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তারা বেশিরভাগই নিজেদের পুরনো বাড়িতেই থাকে। তাই ঘরগুলো খালি পড়ে থাকে।”
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “অনেক গরিব পরিবার এই ঘরগুলোতে থাকতে চায়। স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়।”
স্থানীয়দের দাবি, যারা নিয়মিত ঘরে থাকছেন না, তাদের ঘর অন্য প্রকৃত অসহায় পরিবারদের বসবাসের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত। শুধু ভোগাইপাড় নয়, নালিতাবাড়ীর অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও ঘর ভেঙে পড়ছে, আবার কোথাও ফাঁকা জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে— প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এসব অব্যবস্থাপনায়।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রাজশাহী কলেজে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
৯নং মরিচপুরান ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, “ঘর তালাবদ্ধ থাকার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, “ঘর বরাদ্দ পেয়েও যারা নিয়মিত বসবাস করছেন না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারের মানবিক এ উদ্যোগকে অর্থবহ করতে হলে নিয়মিত তদারকি ও প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা হালনাগাদ করা জরুরি। অন্যথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং অসহায় মানুষগুলো তাদের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।