
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন গণকপাড়া এলাকায় আবাসিক হোটেলের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দেহ ব্যবসা ও মাদক সেবনের আসর। শিক্ষা নগরীতে পড়তে আসা বহু কলেজ শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ ইয়াবাসহ নানা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। হোস্টেলে থাকা অনেক তরুণ–তরুণী নিরাপদ ‘রুম ডেট’র জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছে হোটেল পদ্মাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি আবাসিক হোটেলকে।
গত কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল পদ্মায় নানা বয়সী মানুষ নিয়মিত প্রবেশ করছে এবং কেউ ২০ মিনিট, কেউবা এক ঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দারা জানান, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে প্রতিদিন–দিনরাত চলছে এসব অনৈতিক কার্যক্রম। তাঁদের দাবি, হোটেলের মালিক আজাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
অবাক করা বিষয়—হোটেলটির মাত্র দুই ধাপ দূরেই মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু থানা বা ফাঁড়ি পুলিশের কখনো কোনো অভিযান হয়নি বলে দাবি এলাকাবাসীর। তারা বলেন, “ডিবি দুই বছর আগে একবার অভিযান দিয়েছিল। কিন্তু থানার পুলিশ কখনো মাথা ঘামায়নি। রাজশাহীতে হোটেলগুলোতে পুলিশ ঢোকে না, শুধু ডিবি ছাড়া।”
অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রাও—হোটেলটির আশপাশে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় থাকায় কয়েকজন পাতিনেতার প্রশ্রয়ে আজাদ প্রকাশ্যে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একজন স্থানীয় বলেন, “প্রশাসন আর নেতাদের আশ্রয় না থাকলে আজাদ এত সাহস পায় কীভাবে? অন্য জেলা থেকে এসে সে বছর বছর এটা চালিয়ে যাচ্ছে।”
অভিযোগের বিষয়ে হোটেল মালিক আজাদকে প্রশ্ন করলে তিনি প্রায় স্বাচ্ছন্দ্য ভঙ্গিতেই জানান, প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করেই ব্যবসা চালান। তার ভাষায়, “এখন চুপচাপ মাত্র দুইজন মেয়ে রেখেছি। সমস্যা হলে কাজের মেয়ে বলে চালিয়ে দেব। কারও ক্ষতি করি না। সম্পর্ক ভালো রেখেই চলি।”
আরও পড়ুনঃ রামগঞ্জে ন্যায় ও কল্যাণকর সমাজ গঠনে ইমামদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা
ডিবি সূত্র জানায়, আজাদকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি হোটেলের নাম বা অবস্থান বদলে আবার নতুন কৌশলে ব্যবসা শুরু করেন। ডিবি কর্মকর্তাদের মতে, আজাদের কোনো অনুশোচনা নেই—বরং আগের চেয়ে আরও ধূর্ত কৌশলে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার মাঈনুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বিশেষ অভিযান নিয়মিত চলছে। খুব শিগগিরই ওই স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, হোটেলকে কেন্দ্র করে মাদক লেনদেন ও দেহ ব্যবসার কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা—যুবসমাজ আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাঁরা অবিলম্বে কঠোর প্রশাসনিক অভিযান, জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং হোটেল পদ্মাসহ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।



