
মোঃ বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের নালা ও কালভার্টের মুখ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে দালান বাড়ি। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বরভিটা গ্রামের বাসিন্দা মৃত শওকত আলীর ছেলে মোজাম্মেল হক বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন। তার বাড়িটি নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে ওই এলাকার প্রায় পাঁচশো বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন।
জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে দফায় দফায় বাড়ির মালিকের সাথে আলাপ-আলোচনা করেও কোন সুরাহ হয়নি। পিয়ন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয়দের বলেন ‘আমি ভূমি অফিসের পিয়ন। নালার মুখ খুলে দেবো না কার কি করার আছে করেন’। পিয়নের ক্ষমতার দাপটে নিরুপায় স্থানীয়রা সমস্যার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কালভার্টের মুখ ভরাট কয়ায় ওই এলাকার শত শত বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পটল, মরিচ, লাউ, বরবটি, ঢেঁরস খেত সহ আমনের বীজতলা।
স্থানীয় কৃষক আবু বক্কর (৫৮) বলেন, আমার বোধ হয়েছে থেকে দেখেছি এই এলাকার জমির পানি এই কনভার্ট দিয়ে নেমে যেত। বছর দেড়েক আগে ভূমি অফিসের পিয়ন মোজাম্মেল জমি কিনে এখানে বাড়ি নির্মাণ শুরু করে। আমরা এলাকাবাসীরা বহুবার কালভার্ট বন্ধ করতে নিষেধ করেছি। কিন্তু মোজাম্মেল আমাদের কারোরই কথা শুনেনি। সে আমাদেরকে শাসিয়ে বলে, আমি ভূমি অফিসের পিয়ন আইন আমারও জানা আছে। আমি কালভার্টের মুখ খুলে দেবো না। কার কি করার আছে করেন। তাই আমরা বাধ্য ইউএনও কে অভিযোগ দিয়েছি।
আরও পড়ুনঃ বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনীতি করছে : ওবায়দুল কাদের
বেলাল হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, এখানে আমার তিন বিঘা জমি আছে। সেই জমিতে চাষাবাদ করে আমার সংসার চালাই। মোজাম্মেল কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় এখন আমার জমিতে আবাদ হয়না। জমি সারাবছর পানিতে তলিয়ে থাকে। আমরা চাই এর একটা সমাধান করা হোক। স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম, মিলন মিয়া, আমিনুল ইসলাম, মশিউর রহমান, আব্দুল জলিল ও নাজমুল ইসলাম বলেন, নালা ও কালভার্টের মুখ ভরাট করার কারণে আমাদের সবজির খেত, আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এখনই কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়া না হলে আমন মৌসুমে এখানকার প্রায় ছয় থেকে সাতশো বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি পড়ে থাকবে। আমরা অভিযোগ করেছি। আশা করি প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। আর আমার টাকায় কেনা জমিতে আমি বাড়ি করেছি। জমির পানির নেমে যাওয়ার জন্য আর কি বিকল্প কোন রাস্তা নাই? সেগুলো দিয়ে পানি নামানোর ব্যবস্থা করলেই তো হয়।
এ বিষয়ে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, ইউএনও স্যার ওই এলাকার জলবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য আমাকে সরজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। সরজমিন পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের জন্য স্যারের সাথে কথা বলবো।
অভিযোগ প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, এ বিষয়ে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সরজমিন পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।