spot_img

― Advertisement ―

spot_img

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা

বেরোবি প্রতিনিধি: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন করা শিক্ষার্থীরা অবশেষে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন।বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের বেগম...
প্রচ্ছদসারা বাংলাকালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল-সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল-সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসকের ২৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৩ জন। বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

তবে কর্মরত ঐ ১৩ জন ডাক্তারের সঙ্গে ৭ জন সহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) তাদের নিজ নিজ দফতরের কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আন্তঃবিভাগ, জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য দফতরের সঙ্গে লিয়াজোঁ মেইনটেইনে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। একই সঙ্গে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

এমবিবিএস ডাক্তারের অভাবে কারণে রোগী দেখছেন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট তারা বহিঃ বিভাগে নিয়মিত রোগী দেখছেন। তাদের এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের নিয়ম নেই তবুও তারা এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা দিচ্ছে পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক এর ওষুধের অভাব রয়েছে। 

আহমেদাবাদ ইউনিয়নের বালাইট গ্রামের আব্দুল সামাদ নামে এক ভুক্তভোগী জানান তার মেয়ে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে একটি এক্সরে করার জন্য দেন হাসপাতালে এক্সরে না হওয়ায় বাহির থেকে এক্সে করতে হচ্ছে। পাশাপাশি দুই দিন ছিল হাসপাতালে ভর্তি রাখার পর তাকে ছাড়পত্র দেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে তার ছাড়পত্র কে বা কাহারা নিয়ে গিয়ে কর্তব্যরত নার্সরা জানেনা ছাড়পত্র কে নিয়ে গিয়েছে ।  কর্তব্যরত নার্সরা জানান এ পর্যন্ত তিনবার খোঁজা হলো আর কতবার খুঁজবো। আপনার কোন লোক ছাড়পত্র নিয়ে গেছে । ভুক্তভোগী রোগীর পিতা জানান আমার কোন লোক নেই আমি নিজেই নিতে আসার কথা সেজন্য আসছি । কিন্তু এখন তারা বলছে আপনার কোন লোক ছাড়পত্র নিয়ে গিয়েছে। এইভাবে রোগীদের ও রোগীর আত্মীয় স্বজনদের হয়রানি করা হচ্ছে।

স্ত্রীরোগ, সার্জারি–বিশেষজ্ঞ না থাকায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ। তবে সপ্তাহে ২ দিন সিজার করা হয়। চিকিৎসকের অর্ধেক পদই শূন্য থাকায় রোগীরা এখানে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসচ্ছল ও দরিদ্র রোগীরা।

আরও পড়ুনঃ চাঁদাদাবী করায় দুই ছাত্রদল নেতাসহ ৩জনকে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নীতকরণের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেও চিকিৎসক ও সরঞ্জাম সংকট ছিল সেই সময়েও।

৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ১০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও পদায়নপ্রাপ্ত আছেন মাত্র ৩ জন; এরমধ্যে অর্থপেডিক্স ডাক্তার থাকলেও প্রেষণে আছেন গাইনি ডাক্তার ও অ্যানেস্থেসিয়া। আর বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের কক্ষ আছে। অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার (অপারেশনের) কাজ হয় না। অপারেশনের যাবতীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও জেনারেটর, সৌর বিদ্যুৎ অকেজো এবং ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও ফিল্ম এর অভাবে বন্ধ থাকে। এর ফলে পুরোনো দিনের এক্স-রে মেশিন দিয়ে চলছে না এক্সরের কার্যক্রম। এছাড়াও আলট্রাসনোগ্রাম সপ্তাহে নিদিষ্ট একটি দিনে করা হয়।

কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞের (জুনিয়র কনসালটেন্ট) ১০টি পদ আছে। এগুলো মেডিসিন, সার্জারি, স্ত্রীরোগ (গাইনি অ্যান্ড অবস), শিশু, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও হৃদ‌রোগ (কার্ডিওলজি)। কয়েক বছর ধরে এসব পদ শূন্য। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৪৯টি পদ ফাঁকা রয়েছে। ঐসব পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকার ফলে হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এর ফলে এখানে এসে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।

স্ত্রীরোগ –বিশেষজ্ঞ না থাকায় নারীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অডিটরিয়াম (হলরুম) না থাকার কারণে সভা-সেমিনারসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে আবাসিক ভবন সংকট থাকায় ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা বেশির ভাগ বাইরে থাকছেন।

এলাকার সাধারণ রোগীদের অভিযোগ, কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে উপযুক্ত সেবা না পেয়ে সামান্য সমস্যাতেই রোগীদের জয়পুরহাট সরকারি আধুনিক হাসপাতাল অথবা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ফলে কালাইয়ের সাধারণ রোগীরা জেলা শহরসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্র নির্ভর হয়ে পড়েছেন। এতে করে হতদরিদ্র রোগীদের ভোগান্তির সীমা নেই। আর এই সুযোগ বুঝে ফায়দা লুটছে ঐ সব ক্লিনিক ও প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্র গুলো। অনেক সময় আবার রোগীরা এলাকার হাতুরে ডাক্তারের খপ্পরেও পড়েন। তাই সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে শূন্য পদে চিকিৎসক পদায়নসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা এলাকার রোগীদের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ এক মাস পর তোলা হলো আন্দোলনে নিহত যুবকের লাশ

কালাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পৌর সদরের আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, আমার শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। এখানে এসে দেখি শিশু ডাক্তার নেই। কর্তব্যরত এক ডাক্তার বললেন, জয়পুরহাট সরকারি আধুনিক হাসপাতালে যেতে। এখানে ডাক্তার থাকলে আমাদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।

উপজেলার করিমপুর গ্রামের শাপলা খাতুন নামে একজন রোগী হাসপাতালে গাইনি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে এলে তাকে না পেয়ে বলেন, শুনলাম অনেক দিন ধরে হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার নেই। তাই ফিরে যাচ্ছি। আমি গরিব মানুষ। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। আমাকে জরুরি ভিত্তিতে গাইনি ডাক্তার দেখাতে হবে। এখন কোনো উপায় নেই। তাই যেকোনো ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফয়সল নাহিদ পবিত্র বলেন, স্বল্প জনবল দিয়েই রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। শূন্য পদে চিকিৎসক ও জনবল দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো  জনবল নিয়োগ প্রদান করেননি।