মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়ায় পদ্মার পানির স্তর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কায় তারা তাদের ঘরবাড়ি এবং সম্পদ রক্ষা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
পদ্মাপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গতকাল থেকে পানির উচ্চতা আরও দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার ফলে ভারতীয় অংশে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের পানিবিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করেছেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমার নিচেই থাকবে এবং বাংলাদেশের জন্য বন্যার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। বর্ষাকালে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খোলা রাখার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, বাঁধের গেটগুলো বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
গত সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ মিটার।
এরে আগে রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী সীমান্তে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার। এ সময় নদীতে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার (এসওবি মাপে)।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ভারতের বন্যার কারণে দেশটি ফারাক্কার গেট খুলে দিয়েছে, যার ফলে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলেছে। চরখিদিরপুর এলাকায় বন্যার পানি ইতিমধ্যে প্রবেশ করেছে। জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী অংশে নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাদ্মাপাড়ের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের বন্যার কারণে ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার পর থেকে পদ্মার পানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে, এখন আমরা বড় বিপদের মুখে আছি।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে স্থানীয় এক বাসিন্দা তাবারক আলী। তিনি পেশায় একজন কৃষক। তিনি বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই এলাকায় সকল কৃষকের ফসল এখন জমিতে রয়েছে । পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ জানায়, রোববার দুপুর থেকে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টায় এবং সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ২০ দশমিক ৪৮ মিটার, যা বিকেল ৩টায় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫০ মিটারে। পাংখা পয়েন্টে বিপৎসীমা নির্ধারিত রয়েছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার।
রাজশাহী নগরীর শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার নির্ধারিত। সোমবার ভোর ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৭ মিটার, যা সকাল ৯টায় আরও এক সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। বিকেল ৩টায় এবং সন্ধ্যা ৬টায় বড়কুঠি পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৩০ মিটার রেকর্ড করা হয়। যা বিপদসীমার বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সেই হিসেবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই। তবে উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে, পদ্মার পানির প্রকৃত অবস্থা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুনঃ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বয়কট, শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দেশের পূর্বাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে যে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, তখন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে, ভারতের ডম্বুর বাঁধ খোলার ফলে এই বন্যা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছিল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তরা বলছেন, সোমবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খোলা থাকার খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারও সমালোচনা শুরু হয়। বলা হচ্ছে, ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার ফলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে, আগামী তিনদিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমার নিচেই থাকবে এবং বাংলাদেশের জন্য বন্যার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। তাদের মতে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, তবে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।