মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুমার শরৎকুমার রায়ের ১৪৯তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল চারটায় জাদুঘরের হলরুমে আয়োজিত হয় আলোচনা ও স্মরণসভা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-গ্রন্থাগারিক মোঃ আসলাম রেজা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উপ-সচিব শফিউল ইসলাম এবং বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ওয়ালিউর রহমান বাবু। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেরিটেজ, রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।
সভায় বক্তারা কুমার শরৎকুমার রায়ের ব্যক্তিত্ব, জাদুঘরের প্রতি তাঁর অগ্রণী ভূমিকা, বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস চর্চায় তাঁর অসামান্য অবদান ও বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে তাঁর ভূমিকা তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদার বংশের সন্তান কুমার শরৎকুমার রায় ছিলেন দয়ারামপুরের খ্যাতিমান রাজা। বিদ্যানুরাগী ও প্রজাহিতৈষী এই রাজা ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশেষত বরেন্দ্র অঞ্চলের লুপ্ত ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে রেখেছেন কৃতিত্বপূর্ণ অবদান। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী সাধারণ পুস্তকালয় (বর্তমান রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি) ও বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠায় তাঁর বংশের রাজা-মহারাজাদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল।
১৯১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’, যার সভাপতি ছিলেন কুমার শরৎকুমার রায়। একই সঙ্গে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং রমাপ্রসাদ চন্দ অনারারি সেক্রেটারি। সেই সময় সমিতির কার্যক্রমে যুক্ত হন ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রামকমল সিংহের মতো বিদ্বানরাও।
আরও পড়ুনঃ দুই সন্তানের জনক মাহফুজের জীবন বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন
পরবর্তীতে শরৎকুমার রায়ের বড়ভাই রাজা প্রমদানাথ রায় বাহাদুর ৫ বিঘা ২ কাঠা ২ ছটাক জমি দান করেন মিউজিয়াম নির্মাণের জন্য। তারই ওপর ১৯১৬ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে কুমার শরৎকুমার রায়ের আর্থিক সহায়তায় (৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে) নির্মিত হয় এক দৃষ্টিনন্দন মিউজিয়াম ভবন। ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর লর্ড কারমাইকেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর লর্ড রোনাল্ডসে এর উদ্বোধন করেন।
এরপর থেকেই বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। কুমার শরৎকুমার রায়ের এই অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে সভায় বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।