তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংস্কার ভাবনা বিষয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারমূলক দাবি পেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট। পরে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মতামত পেশ করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, এবং রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মত বিনিময় সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমরা এখন নতুন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই বাংলাদেশ পেয়েছি। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবে নতুনত্ব তৈরি হয়। বাংলাদেশ আর পিছনে ফিরে যাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফিলোসোফিকে সামনে রেখে সকলের অংশগ্রহণে গঠিত হবে সাম্য, মৈত্রী ও বন্ধনের বাংলাদেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর অঙ্গনে পরিণত হবে। \
আরও পড়ুনঃ সার্কুলার ইকোনমি এন্টপ্রেনরশীপ প্রোগ্রামে প্রথম পবিপ্রবি
তিনি আরো বলেন, আমার মূল কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সংস্কার ও গবেষণা কাজকে ত্বরান্বিত করা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যদিও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, তবে তার মূলমন্ত্র হলো ইসলামী শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষার মাঝে সমন্বয় করা। এ দুটির একটিকে বাদ দিলে সুন্দর সমাজ গঠনের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ হবে না। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনে গিয়ে শিক্ষা পদ্ধতির যে মডেল দেখেছি সেই মডেলকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসরণ করবো।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করি। তোমাদের সংস্কারের দাবি আমার কাজকে আরো সহজ করে দিয়েছে । তবে আমার কাজ হবে পর্যায়ক্রমিক এবং সুচিন্তিত প্রক্রিয়ায়। কারণ তাড়াহুড়ো করে করা কোনো কাজ ভালো হয় না। আমরা আইন অনুসারে কাজ করতে চাই। কারণ আইন অনুসারে যদি সবাই চলে তাহলে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবাইকে সমানভাবে দেখা হবে। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাঙ্গন চাই৷
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভিসি বলেন, “তোমাদের মূল পরিচয় তোমরা শিক্ষার্থী। আমি চাইবো শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসমুখী হয়। তারা যেন ক্লাস-শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় এবং গবেষণা কেন্দ্রিক অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। তোমরা সময়ের সাথে জীবনকে না বাঁধলে পিছিয়ে যাবে। এমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রদের নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি।”
এছাড়া তিনি বলেন, “বিগত সময়ে স্বৈরাচাররা তোমাদের কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করেছিলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তোমরা সেই স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছ। আমি বিশ্বাস করি তোমরা সেই স্বাধীনতার চর্চা অব্যাহত রাখবে। সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার থাকবে।”