ডালিয়া হালদার, ববি প্রতিনিধিঃ যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন ও বরিশাল জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১অক্টোবর) যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি এগারো দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূ্ল ফটকের সামনে মানববন্ধন করে।যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিন দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু করা, আমডাঙ্গা খাল দ্রুত সংস্কার এবং নদীর নাব্যতা ফেরাতে পলি অপসারণ করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে এসব দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় আগামী ৬ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিব হাসান , আছাদুল্লাহ আছাদ , মেহেদী হাসান নাহিদ, মৃত্যুঞ্জয় রায়,মেহেদী হাসান স্বাধীন ও সৌরভ মণ্ডল।তারা বলেন,দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ দীর্ঘ ৪৪ বছর স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ভবদহ স্লুইসগেট, পোল্ডার, নদী-পানি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ এর কারণ। এই জনপদে ভবদহ স্লুইসগেট একটি মরণফাঁদ। এর কোনো কার্যকারিতা নেই, নেই পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা।
আরও বলেন, ২০০ থেকে ৩০০ ফুট প্রস্থ ও সুগভীর নদী ভরাট হয়ে পানি বহনের ক্ষমতা হারিয়েছে। বর্তমানে নদীর প্রস্থ কমে ১৫ থেকে ২৫ ফুট হয়েছে। ৪৪ বছরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সংস্কারের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদার চক্রের লুটপাটের সুবিধার্থেই তা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত। এলাকার জনগণের আবাদি ফসল, বসতঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। পানিতে ডুবে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এলাকা প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য হারিয়েছে। অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন,এই দায় সরকারের।
মানববন্ধনে বলা হয়, স্থানীয় জনগণ উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণ–আন্দোলনের চাপে গৃহীত হলেও বিগত সরকার ২০১২ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অজুহাতে তা বাতিল করে দেয়। ওই হামলা হয়েছিল স্বপন ভট্টাচার্যের প্রত্যক্ষ সহায়তায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি, বরং তাঁকে (স্বপন ভট্টাচার্য) এমপি-মন্ত্রী বানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ পাচারকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে বিদেশে ৭১টি দেশে চিঠি, উত্তর পেয়েছে ২৭টি
বক্তরা বলেন জলাবদ্ধতার কারণে ‘এই জনপদের গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে। মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর শুধু নয়, জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও যশোর শহর পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণ সরকারকে জানিয়ে আসছে যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে খুলনার বারোআওড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকার চার শতাধিক গ্রাম, আবাদি ফসল, বসতঘর, বাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, শ্মশান, ব্যবসা-বাণিজ্য পানির তলে চলে যাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার স্মারকলিপি পেশ, অনুরোধ করেও লুটেরা সিন্ডিকেটের স্বার্থে তাদের কথা কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু দুর্গত শত শত নারী–পুরুষকে লাঠিপেটা ও রক্তাক্ত জখম করেছে। তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। স্থানীয়রা যে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলে আসছিল, সে ঘটনাই ঘটে চলেছে।’ অর্থাৎ ছয়টি উপজেলার ২০০টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
মানববন্ধন শেষে, যশোরের ভবদহ অঞ্চলের নদী, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও জনপদকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে ১ অক্টবর বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে বরিশালের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।