মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে একটি ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে হোস্টেলের সি ব্লকের ২০৫ নম্বর রুম থেকে ল্যাপটপটি চুরি হয়। তবে ঘটনার কোনো ফুটেজ সংরক্ষণে পাওয়া যায় নি। এমনকি ব্যবস্থা নিতে কলেজ ও হোস্টেল প্রশাসন গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে হারানোর পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে হোস্টেল ও কলেজ প্রশাসনকে ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি জানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু রায়হান। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো যে রুম থেকে ল্যাপটপ চুরি হয়েছে সেই রুমের অন্য শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন জব্দ করে গেটম্যানের কাছে রাখতে বলেন হোস্টেলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক।
তবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে চুরির সময়কালীন ফুটেজ নেই বলে হোস্টেলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যামেরাগুলো ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার কথা থাকলেও হল প্রশাসন তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফুটেজ হারানোর ঘটনায় ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ঘটনার পরও হল প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করছে। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোস্টেলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি সিসিটিভি ক্যামেরা চুরির সময় কাজ না করে, তাহলে এতগুলো ক্যামেরা বসিয়ে লাভ কী? আমাদের নিরাপত্তার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আদৌ কার্যকর কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু রায়হান বলেন, ল্যাপটপ চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি হল প্রশাসনকে অবহিত করেছি। প্রশাসন আশ্বাস দেয়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীকে শনাক্ত করা হবে। তবে শনিবার সকালে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত কোনো ফুটেজই নেই। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই সময় সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল।
স্যাররা প্রথমে বলেছিলেন ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করবেন। কিন্তু পরে জানতে পারি, ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার পরও স্যারেরা যথাযথ ব্যবস্থা নেন নি। এতে আমি ভীষণ হতাশ। দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি।
এদিকে হল প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি মিটিং আয়োজন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের এই বিলম্ব তাদের উদাসীনতারই প্রতিফলন। চুরির ঘটনা এবং সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ায় ছাত্রাবাসেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার পেছনে শুধুমাত্র গাফিলতিই নয়, ইচ্ছাকৃত কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও মত তাদের।
সিসিটিভি ফুটেজ গাইড সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, দেখি আমরা আজ (রোববার) বসবো, আমি ছিলাম না, ছুটিতে ছিলাম। বসে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করবো। আনফরচুনেটলি আমাদের প্রি-পেইড মিটারের রিচার্জ ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে শুনলাম। যে কারণে ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। যে মিটার দেখে, সে আমাদেরকে আগে ইনফর্ম করেনি, যে কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুনঃ রামগঞ্জে দৈনিক “আমার দেশ” না আসায় পাঠকদের হতাশা
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুঃ যহুর আলী বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়েছে কিভাবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা কি প্রিন্সিপালের দপ্তরে আছে না হোস্টেল সুপার দপ্তরে আছে? যার ল্যাপটপ হারিয়েছে তাকে আমার কাছে লিখিত আবেদন করতে বলো। আর ফুটেজ হারিয়েছে, এটা রাজ আইটি সাপ্লাই দিয়েছে, তাদের সাথে কথা বললে ভাল হয়। এর বাহিরে আমার জানা নাই। রাজ আইটি সিসি ক্যামেরার কাজটি করেছে, তারা এটি চালু করেনি বলে জানলাম। কেন চালু করেনি সেটির জবাব তো আমি দিতে পারবো না, ওদেরকে আমি ডেকে কথা বলে নিচ্ছি। তারপরে আমি দেখছি। আর তোমার (প্রতিবেদক) পক্ষ থেকে যেটি বলার বলো’- বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি তিনি।
তবে ঘণ্টা খানেক পর ফোন দিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে সিসি ক্যামেরার সার্ভারে তথ্য থাকে না।’
এ দিকে ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদি মাসুদ বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত চলছে, যদি পাওয়া যায় তখন জানানো হবে।