
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে জনবল সংকটের কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যসহ চুরির সংখ্যা বেড়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী দিনে আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে আনসার সদস্যদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। ফলে বিশ্রামের অভাবসহ অন্যান্য সমস্যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পাস বন্ধের আগেই চুরির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত এই সংকট মোকাবিলায় নতুন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ রেঞ্জের মোট ৯৪ জন আনসার সদস্য ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৭ জন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি পাহারার কাজে নিয়োজিত। বাকি ৮৩ জন বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করেন, তবে তাদের মধ্য থেকে চক্রাকারে ছয় থেকে সাতজন ছুটিতে থাকেন। ফলে প্রতিদিন ৭৬-৭৭ জন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, যেখানে তিন শিফটে অন্তত ৯৮টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জনবল সংকটের কারণে অনেক নিরাপত্তাকর্মী এক দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন, যা তাদের পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে, বিশেষ করে রাতের শিফটে অনেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না।
এদিকে, রমজান মাসে ক্যাম্পাস বন্ধের শুরুতেই ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে জিয়া হল সংলগ্ন একটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকার মালামাল খোয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময় হল, আবাসিক এলাকা, প্রভোস্ট কোয়ার্টার ও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগত ও অবকাঠামো নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকদের দ্বারা ছিনতাই, মেয়েদের হলের পাইপ বেয়ে ওঠার চেষ্টা এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মতো ঘটনাও শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত করছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, “হল ও একাডেমিক ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। ক্যাম্পাস বন্ধের সময় বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও চুরির ঘটনা বাড়ে, ফলে আমরা বাড়ি গেলেও শঙ্কায় থাকতে হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে কিছু আনসার সদস্যের পক্ষে পুরো রাত জেগে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। তবে টহল ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে এবং রাতের শিফটে দায়িত্ব পালনের তদারকি করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুনঃ ঈদে জমজমাট রাজশাহীর কসমেটিক বাজার
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “প্লাটুন কমান্ডারদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো আনসার দায়িত্বে ঘুমিয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫ জন আনসার চেয়ে প্রশাসনকে নোট পাঠানো হয়েছে, যা সিন্ডিকেট অনুমোদনের পর ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ পেলে নিরাপত্তা সংকট কেটে যাবে।”
শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত নতুন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য ও চুরির ঘটনা বন্ধ হয়।