
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড রিসার্চ (সিপিআর)। একই সঙ্গে কমিশন সংস্কার ও নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকারের কাছে নতুন সুপারিশ প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সভাকক্ষে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
গোল টেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিপিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান। এছাড়া আলোচক হিসেবে অংশ নেন অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি, অধ্যাপক ড. ময়নুল হক, অধ্যাপক ড. আবু বকর মো. জাকারিয়া, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ. ব. ম. সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী, ড. হামিদা খাতুন, ড. খন্দকার আরিফা আক্তার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আশরাফ উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচকরা বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ইসলামি উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত আপত্তিকর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। তারা অভিযোগ করেন, এই কমিশনের প্রস্তাবনা কেবল ধর্মবিরোধীই নয়, বরং কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আলোচকরা প্রশ্ন তোলেন, যারা এ দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতা বোঝে না, যাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই, তারা কীভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক সুপারিশ দিতে পারে?
তারা আরও বলেন, কমিশনে কোনো ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব নেই; ফলে ইসলামী মূল্যবোধ ও সমাজ বাস্তবতা বিবেচনা না করেই পশ্চিমা চিন্তাধারার ভিত্তিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা। তাদের মতে, এ ধরনের একপাক্ষিক ও বিতর্কিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণকে অবমাননা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আরসিআরইউ’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফিলিস্তিনে নিহতদের মাগফিরাত কামনা
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিরীন পারভীন হক। কমিশন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে মোট ৪৩৩টি সুপারিশ জমা দেয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সন্তান পালনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন সংশোধন, সংসদীয় আসন ৬০০-তে উন্নীত করে তার মধ্যে ৩০০ নারী আসনের সংরক্ষণ এবং যৌনকর্মীদের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব।
এই প্রস্তাবনাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সিপিআর দাবি করে, এমন ধর্মবিরোধী ও বিতর্কিত কমিশন অবিলম্বে বাতিল করে দেশের বাস্তবতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে নতুন কমিশন গঠন করা হোক।