মো: আলিফ হোসাইন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) এ বছর ২৬ বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আবাসন সংকট, নিরাপদ পানি ও পরিবহন সংকট, ছাত্ররাজনীতির দৌরাত্ম্য, লাইব্রেরি সুবিধার অভাবসহ নানামুখী সমস্যার কোনো সুষ্ঠু সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবাগত শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক হারুনুর রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ভালো হলেও মেয়ের আবাসন সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রভাব এবং মাদকাসক্তির প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। নেশাজাতীয় দ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে।”
লাইব্রেরির কথা বলতে গেলে, প্রয়োজনীয় বই ও গবেষণার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। নেই কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেমিস্টার ফি বৃদ্ধি সত্ত্বেও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সরঞ্জাম ও আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি।
পরিবহন ব্যবস্থাও অত্যন্ত করুণ। বাসের সংকটের কারণে (৬০-৮০ জনের বাসে) (২৫০-৩০০) শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছে, যা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে সবুজায়নের প্রচেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। পরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে ফেলা হলেও নতুন করে বৃক্ষরোপণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক। জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অভাব, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সরঞ্জাম না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী সদর হাসপাতালে দৌড়াতে হয়। অথচ ওয়ার্কাস অফিসে নিয়োগ বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি থেকেই গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত জমির বড় অংশ স্থানীয়দের দখলে চলে গেছে, যা ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সংবাদ প্রকাশের জেরে রাজশাহীতে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, নিন্দার ঝড়
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা আধুনিক, সবুজায়িত একটি ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখেছিলাম। বাস্তবতা বড়ই হতাশাজনক।”
ক্যাম্পাসে কোনো ক্যান্টিন বা সকালের খাবারের ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বাইরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের অতিরিক্ত দামের খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান করে মাভাবিপ্রবিকে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।