spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ইবি সিআরসি’র আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দিনব্যাপী ফল উৎসব

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো এবং আনন্দে ভরিয়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “কাম ফর রোড চাইল্ড (সিআরসি)”...
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইবিতে সাংবাদিককে হেনস্তা; ছাত্রলীগের প্রতিবাদ

ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইবিতে সাংবাদিককে হেনস্তা; ছাত্রলীগের প্রতিবাদ

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার জুলাই আন্দোনকারীদের দু্র্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে হলে অবস্থান এবং কলেজজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ওয়াসিফকে হলে উঠতে বাধা দেয়। ঘটনার দিন তাকে হলে দেখা গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এরপর এক পর্যায়ে তার কক্ষের লাইট বন্ধ করে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন আবরার। আহত অবস্থায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রেফার করেন।

এ ঘটনায় নিষিদ্ধ সংগঠন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান হাফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া সমন্বয়কদের একটি পক্ষও এবিষয়ে প্রতিবাদ জানান।

এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং দফায় দফায় তাদের বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায়। এ সময় দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা ভিসি বাংলোর সামনে অবস্থান নেন। পরে রাত সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় প্রক্টর অফিসে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই গ্রুপের শিক্ষার্থী তাদের অভিযোগ উত্থাপন করেন।

এ বিষয়ে ইবির সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, “আবরারের বিষয়ে আমরা চাই এক জায়গায় বসে তার নেগেটিভ ও পজিটিভ নিউজ উভয়ই ধরে নিয়ে প্রমাণ করি, আবরার ফ্যাসিস্টদের দোসর কিনা? আমি মনে করি আবরার জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তাই তাকে আমি ফ্যাসিস্টের দোসর মনে করি না। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের পর বিভিন্ন ঘটনায় আমরা হলে গেছি। তদ্রুপ আজকের ঘটনায়ও আমরা গেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভিসি বাংলোয় অবস্থানের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আবরারের ইস্যু নিয়ে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার সঙ্গে আমি কথা বলিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ ব্যাপারে আমরা বসতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ব্যাপারে জানেন। কিন্তু সবাই জানার পরও এক টেবিলে বসার কোনো পরিস্থিতি হয়নি। তারপরও উপাচার্য স্যারের কাছে যাওয়ার প্রক্রিয়া ভাঙ্গায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর তাকে শেল্টার দিচ্ছে অন্য একটি পক্ষ। তারা প্রাধ্যক্ষ স্যারের উপর দিয়ে বলেছে, ‘আমরা দেখছি তুই হলে থাক।’ তারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করছে, যা ছাত্ররা মেনে নেয়নি। তার রুমে গিয়ে তাকে হল থেকে নেমে যেতে বলেছে শিক্ষার্থী। হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরও সে আবার উঠেছে। এগুলো সে নিজ থেকে করেনি, নিশ্চয় কারো ইন্ধন আছে। তাকে বলার পর সে যখন নেমে যাচ্ছিল, তখন কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। এদের হয়তো আবরার ফোন দিয়েছে। এক সময় সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কিন্তু গুরুতর আহত হয়েছে এমন না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পারভেজ হাসান বলেন, “তার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা ধারণা করছি, তার শ্বাসনালীতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে সে সুস্থই হয়ে গেছিল। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিল। এ সময় রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং বাইরে থেকে আবার তার উপর আক্রমণ হতে পারে- এমন কথা শুনে তার নিরাপত্তার কথাসহ যাবতীয় বিষয় চিন্তা করে কুষ্টিয়ায় রেফার করেছি।”

শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, “আবরার আমাদের হলের এটাস্ট না। অনেকদিন ধরেই ও হলে থাকে। ও ছিল জিয়া হলের এটাস্ট। আমরা হল কর্তৃপক্ষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাইগ্রেশানের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সে এই সুযোগ নেয় নি। আমরা যখন নোটিশ করি, অছাত্রদের হল ত্যাগ করার, ও তখন পুনরায় সুপারিশ নিয়ে আসে। কিন্তু পূর্বের মাইগ্রেশান দেওয়ার পর আর এ সুযোগ আমি কাউকে দেয়নি।”

তিনি বলেন, “আমি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়ার জন্য তাকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেই এবং সে চলে যায়। কিন্তু গত পরশু আমি জানতে পারি, সে আবার হলে আসছে। পরে তার রুমমেটকে কল দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুরোধ করি, আবরার যেন হলে না আসে। তার রুমমেট আমাকে আশ্বস্ত করে জানায়, সে ব্যবস্থা করবে। তারপরও আজ রাতে আবরার হলে আসলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা খুবই অপ্রত্যাশিত; এটা উচিত হয়নি।”

আরও পড়ুনঃ তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

এ নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি জানান, এ ঘটনায় সমন্বয়কদের প্রথম ভুল. তাদের সমন্বয়হীনতা এবং প্রথমেই হল প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরিয়াল বডিকে না জানানো। দ্বিতীয় ভুল, যারা ওই হলের স্টোকহোল্ডার না, তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে সেখানে গেছে। সর্বোপরি এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাঝে বিদ্যমান বিভাজন দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমি প্রক্টরকে বলেছি। এ বিষয়ে তিনি যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

প্রসঙ্গত, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকা এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত ৭ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ওয়াসিফ আল আবরারকে সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় অবৈধ সিট দখল করে দীর্ঘদিন হলে অবস্থান ও জুলাই আন্দোলনকারীদের দু্র্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আবরার তার এলাকায় (পাবনায়) থাকতে ছাত্রলীগের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিল।