তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ আয়োজিত পিএইচডি সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট লেনদেনে বিরোধের বুনিয়াদি কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত আইনি সংস্কার প্রয়োজন, না‑হলে নগরায়ণের গতি বাধাগ্রস্ত হবে।
শনিবার, ১৭ মে মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের আইন অনুষদ সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তাঁরা এ মত দেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, “ঢাকা শহরের রিয়েল স্টেট কোম্পানিগুলোতে জমির স্বত্ব জটিলতা, দেরি‑কৃত হস্তান্তর ও প্রতিশ্রুত সুবিধা না‑পাওয়া—এ তিন কারণেই অধিকাংশ মামলা জন্ম নিচ্ছে। বিদ্যমান আইনগুলোতে স্পষ্টতা নেই; ফলে ভুগতে হয় ক্রেতা‑বিক্রেতা উভয়কে। গবেষণায় প্রস্তাব করেছি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ADR) বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং রেজিস্ট্রি‑বিশেষ আদালত গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুব বিন শাহজাহান মন্তব্য করেন, “আইন সংস্কার ছাড়া নির্মাণ‑খাতের কাছে টেকসই সমাধান নেই। ঢাকার মডেলটি সফল হলে চট্টগ্রাম‑রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরেও বাস্তবায়ন সম্ভব।” সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভান্স স্টাডি কমিটির চেয়ারম্যান ড. সেলিম তোহা বলেন, “জমির দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মামলা—এ চক্র ভাঙতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান পরামর্শ দেন, “রিয়েল‑এস্টেট কোম্পানি নিবন্ধনের সময়ই বিরোধ নিষ্পত্তি শর্ত যুক্ত করতে হবে; আইন পরিষ্কার হলে আদালতের চাপও কমবে।”
সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম খান যোগ করেন, “ক্রেতা‑সুরক্ষায় ক্ষতিপূরণ ধারাকে আইনে বাধ্যতামূলক করলে কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি বাড়বে।”
আরও পড়ুনঃ সময়চ্যুত গোপালভোগে রাজশাহীর বাজারে হতাশা
প্রধান অতিথি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার তৌহিদুল আনাম বলেন, “এই গবেষণা শুধু একাডেমিক নয়—বাস্তবমুখী নীতি‑সহায়িকা তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আপনি‑আমি সবাই মিলে সরকারকে সুপারিশ পাঠাব।”
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুন ও অধ্যাপক ড. মো. নাছির উদ্দিন আশাবাদ প্রকাশ করেন, “ঢাকার বাইরে সম্প্রসারণ হলে ক্রেতা‑ভোক্তার আস্থা বাড়বে, অর্থনীতি লাভবান হবে।”
সেমিনারে ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার, বিলাসী সাহাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক‑কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনার শেষাংশে মেহেদী হাসান জানান, “সরকারি‑বেসরকারি অংশীদারিত্বে পাইলট প্রকল্প চালু করলে গবেষণার সুপারিশ মাঠস্তরে কার্যকর করা সম্ভব।” বক্তাদের ঐকমত্য, আইনি ফাঁকফোকর দূর ও দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুললেই রিয়েল‑এস্টেট সেক্টরে সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে।