তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এসব তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, কমিটিগুলো কার্যত মাঠ পর্যায়ে কোনো অনুসন্ধান না চালিয়ে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও হলে গণবিজ্ঞপ্তি ও অফিসিয়াল চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ তথ্য না দিলে কমিটির সদস্যদের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এ যেন পরগাছার ন্যায় অন্যের ভরসায় চলছে তদন্ত কমিটি। অনেক সময় এসব উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই না করেই প্রতিবেদন আকারে দাখিল করার অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছরে (২০০৯ সালের ৯ই মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত) আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে গত ১৬ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খানকে আহ্বায়ক, শরীর চর্চা ও শিক্ষা বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মাছুদুল হক তালুকদারকে সদস্য সচিব এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
আরেকদিকে, গত ১৫ মার্চ চব্বিশের জুলাই আন্দোলন বিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা চিন্থিত করার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এতে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক, বিএনসিসি অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান মজুমদারকে সদস্য সচিব, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিন্নাতুল করিমকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, উভয় কমিটি মাঠপর্যায়ে কার্যকর অনুসন্ধানের পরিবর্তে চিঠিপত্র ও গণবিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ রয়েছেন। বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ, হলগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। তবে তদন্ত কাজে স্বত্ত্ব:প্রণোদিত হয়ে কমিটি কর্তৃক নথিপত্র ঘেঁটে বাস্তব চিত্র খুঁজে বের করা বা ক্ষতিগ্রস্তের সাথে যোগাযোগ করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এছাড়া পূর্বের অনেক তদন্তে অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্য কোনোরূপ যাচাই বাছাই না করে তদন্ত প্রতিবেদন আকারে তা দাখিল করার ঘটনা ঘটেছে। যা নিরপেক্ষ তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মনে করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, আগেও এমন অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, যেগুলো নামমাত্র কাজ করে শেষ পর্যন্ত চাপা পড়ে গেছে। মূল সমস্যা হলো, এসব কমিটি তথ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে। বাস্তবে অধিকাংশ কমিটির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নথিপত্র বিশ্লেষণ কিংবা সরেজমিনে ঘটনা অনুসন্ধানের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, কেবল চিঠির মাধ্যমে তথ্য চেয়ে বসে থাকলে তদন্ত প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়বে। তদন্ত কমিটি যেন প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করে। শুধু চিঠি পাঠিয়ে নয়, বরং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে, তথ্যসূত্র যাচাই করে এবং নিরপেক্ষভাবে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, আমরা তথ্য চেয়ে বিভিন্ন অফিস, দপ্তর, বিভাগে নোটিশ দিয়েছি। পূর্বে যারা তদন্ত কাজ করেছে তাদের থেকে আমরা তথ্য-উপাত্ত চেয়েছি। তবে আশানুরূপ তথ্য পাইনি। বিষয়টি ভিসি স্যারকে অবগত করলে তিনি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার তথ্য চাওয়ার পরামর্শ দেন। আমরা আবার বিজ্ঞপ্তিও দিবো পাশাপাশি সমন্বয়ক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠন ভিত্তিক আলোচনা করবো। আগামী সপ্তাহে কমিটির সদস্যদের সাথে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
এ বিষয়ে আরেক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফারুকুজ্জামান বলেন, আমরা তথ্যের জন্য প্রায় ৬৮ টি জায়গায় নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু আশানুরুপ সাড়া পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরও কোনো অভিযোগ পাইনি। প্রাথমিকভাবে আমরা মিডিয়ায় অতীতের বিভিন্ন দুর্নীতির কিছু নিউজ ক্লিপ সংগ্রহ করেছি। তবে দুর্নীতির তদন্তে অতীতে বিভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ করা, অনেক সময় মামলা মোকদ্দমা হয়েছে সেগুলো চেক করা শুরু করিনি। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য জমা করেছি, পর্যালোচনা শুরু করিনি।
আরও পড়ুনঃ ভালুকা পৌরসভা মহিলা দলের নতুন কমিটি ঘোষণা, সভাপতি গোলাপী-সম্পাদক মাহমুদা
পর্যালোচনা শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কমিটির সদস্যদের পার্সোনাল ব্যস্ততা আছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় একটা বড় টাইম ডিউরেশান। যা জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী একটা কাজ। তদন্তের তথ্য বেশিরভাগ গোপনীয়, গোপন নথিপত্র যাচাইয়ে ব্যাক সাপোর্ট হিসেবে প্রশাসন থেকে একটা কক্ষ চেয়েছিলাম তা যথাসময়ে পাইনি। তবে আগামী সপ্তাহে একটা কক্ষ আমরা পেতে পারি। তখন কাজের গতি কিছুটা বাড়বে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, তদন্ত কাজে কমিটিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদানে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া আছে। তদন্তের জন্য আলাদা করে কোনো কক্ষ বা অফিসের ব্যবস্থা করা জরুরি না। তবে প্রয়োজন হলে তথ্য পর্যালোচনার জন্য প্রশাসন ভবনে কক্ষ দেওয়া সম্ভব না হলেও বিকল্প উপায় দেখবো।