spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসঅযত্ন-অবহেলায় তালাবদ্ধ রাজশাহী কলেজের শতবর্ষী জাদুঘর

অযত্ন-অবহেলায় তালাবদ্ধ রাজশাহী কলেজের শতবর্ষী জাদুঘর

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজের গৌরবময় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—শতবর্ষী জাদুঘর। একসময় যেখানে সংরক্ষিত ছিল ঐতিহাসিক নিদর্শন, মনীষীদের ছবি ও প্রাচীন শিক্ষাসামগ্রী, সেই সংগ্রহশালাটি আজ বহু বছর ধরে পড়ে আছে তালাবদ্ধ, অযত্ন-অবহেলায়।

রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনের একটি এককক্ষবিশিষ্ট ঘরে স্থাপিত জাদুঘরটি অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-জনসাধারণের কাছেই অজানা। দীর্ঘ অনুরোধ ও অপেক্ষার পর এক দুপুরে তালা খোলা হলে দেখা যায়, জাদুঘরের দেয়ালজুড়ে নামহীন, সালবিহীন ধুলোমাখা প্রতিকৃতি, কোথাও পড়ে আছে পুরোনো নথিপত্র, বই আর গবেষণা সামগ্রী।

জাদুঘরে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের টেবিল ফ্যান, কাঠের আলমারি, রেডিও, আয়না, ঝাড়বাতি, প্রাচীন ঘড়ি, মাইক্রোস্কোপ এবং একটি পুরোনো প্রিন্টিং মেশিনসহ নানা দুর্লভ বস্তু। এসব নিদর্শন ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন হলেও তা পড়ে আছে অবহেলিত অবস্থায়, যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুর মতো।

সরেজমিন দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলের ৮টি ঘড়ি, ৩টি রেডিও, ২টি পুরস্কার মেডেল, ৩৪টি কাঠের ওপর ছাপা ঐতিহ্যের প্রতিকৃতি, ২টি মাইক্রোস্কোপ এবং ৬টি বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পড়ে আছে ধূলোমলিন অবস্থায়। তবে এসব সংরক্ষণের নেই কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ। এমনকি কলেজের লাইব্রেরিয়ানও অবগত নন এই জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া ফেরদৌস বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “রাজশাহী কলেজে যে জাদুঘর আছে, সেটাই প্রথম শুনছি। আমাদের কখনোই তা জানানো হয়নি।”

আরেক শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, “কলেজের ইতিহাস জানার আগ্রহ থাকলেও তা জানার সুযোগ পাই না। শ্রেণিকক্ষে ইতিহাসচর্চাও হয় না। অথচ লাইব্রেরিতে এর অনেক বই রয়েছে।”

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, অবিলম্বে জাদুঘরটিকে সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক এবং রাজশাহী কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে এই সংগ্রহশালাকে ব্যবহার করা হোক আধুনিক রূপে।

আরও পড়ুনঃ অভ্যুত্থান বিরোধীদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইবি উপাচার্যের বরাবর স্মারকলিপি

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী বায়জিদ সরকার বলেন, “জাদুঘরটি শুধু সংস্কার নয়, তা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানার কেন্দ্রে পরিণত হয়। অন্যথায় এসব ঐতিহাসিক বস্তু নষ্ট হয়ে যাবে, যা আমাদের সংস্কৃতির দেউলিয়াত্বের প্রমাণ হয়ে থাকবে।”

সাংস্কৃতিক কর্মী অলিউর রহমান বাবু বলেন, “জাদুঘর হলো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য বহনের নিদর্শন। রাজশাহী কলেজের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা।”

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. যহুর আলী বলেন, “জাদুঘরের উন্নয়ন বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা পেলে জাদুঘরটির উন্নয়ন সম্ভব।”

তালাবদ্ধ এই জাদুঘর যেন রাজশাহী কলেজের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া স্মারক। সময় এসেছে এটিকে উদ্ধার করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার।