
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্মিত কোটি টাকার আবাসিক ভবনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত অবস্থায়। সরকারি নীতিমালার আওতায় অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তার অভাব ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় বর্তমানে এসব ভবনের ৭৭ শতাংশ বাসাই মানবশূন্য। অথচ পুরাতন এসব ভবন সংস্কার বা ব্যবহারের উদ্যোগ ছাড়াই নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ও প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০টি আবাসিক ভবনে মোট ৯৯টি বাসা থাকলেও এর মধ্যে বর্তমানে তিনটি ভবন সম্পূর্ণ ফাঁকা এবং মোট ৭৮টি ফ্ল্যাট খালি পড়ে রয়েছে। ভবনগুলোর অবস্থা এখন এমন যে, চারপাশ ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে, গায়ে শেওলা জমেছে, ভবনগুলোর অভ্যন্তর থেকে নিয়মিত চুরি হচ্ছে জানালা-দরজা ও অন্যান্য সামগ্রী। বিদ্যুৎ নেই, বৃষ্টির পানি ঢুকে কক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
অবাক করা বিষয় হলো, পুরোনো ভবনগুলো কার্যত অব্যবহৃত পড়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একই সঙ্গে নতুন করে ৩৬টি শিক্ষক ও ৩৬টি কর্মচারী বাসা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, মূলত ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি নির্দেশনায় ভাড়া আদায়ের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই একযোগে অনেকেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপকদের জন্য ৩৫ শতাংশ ভাড়া হিসেবে কাটা হবে, ফলে গড়ে একজনের মাসিক ভাড়া দাঁড়ায় ২০-৩০ হাজার টাকা, যা স্থানীয় শহর কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহে ভালো বাসা ভাড়ার চেয়েও বেশি।
শুধু ভাড়াই নয়, শহরে সন্তানদের মানসম্মত স্কুলে ভর্তি, চলাফেরার সুবিধা এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় অনেকেই ক্যাম্পাসে না থেকে শহরে বসবাসে আগ্রহী হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম শরীফ উদ্দিন জানান, “দীর্ঘদিন ফাঁকা পড়ে থাকায় ভবনগুলোর অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে ভবনগুলো সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।”
অপরদিকে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে আবাসিক ভাড়া পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করতে। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখ জানান, তারা ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি স্কয়ার ফিটে ৬ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাবনা জমা দেন, যা কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে প্রায় ৮০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দুই মাস পরও কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।
আরও পড়ুনঃ বগুড়া জেলা ছাত্রদলের ৪৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা
বাসা বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, “সরকারি নীতিমালার কারণে কেউ এই ভাড়ায় বাসায় থাকতে চায় না। আমরা চাইছি এসব ভবনকে ‘সাবস্টিডাইজড হাউজিং’ ঘোষণা করে স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানান, “ইউজিসি আমাদের কাছে এই ফাঁকা বাসাগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিল। আমরা পাঠিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবনগুলো এভাবে পড়ে থাকলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, দীর্ঘমেয়াদে স্থাপত্যিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। তবে ভবনগুলো সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হলে যেমন ভবনগুলো রক্ষা পাবে, তেমনি আবাসিক সংকটও অনেকাংশে কমে আসবে।