মো: আলিফ হোসাইন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ‘পর্দা কর্নার’ স্থাপনের দাবির ছয় মাস অতিক্রম হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার অজুহাতে এই উদ্যোগটি কার্যত থমকে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করীম বরাবর লিখিত স্মারকলিপি জমা দেন নারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে আরও ছয় মাস আগে এস্টেট অফিসে লিখিতভাবে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পর্দা পালন এবং ধর্মীয় অনুশীলনের সুযোগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় নারীদের জন্য যথাযথ পর্দাবেষ্টিত স্থান না থাকায় অনেক ছাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার গ্রহণ করতে পারেন না, ফলে অনেক সময় না খেয়ে ক্লাসে যোগ দিতে হয়, যা তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে দেওয়া এই স্মারকলিপিতে ‘আল আসলামিয়া পর্দা কর্নার’ নামকরণ প্রস্তাব করেন শিক্ষার্থীরা, যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নারী সার্জন ও নার্স হযরত রুফাইদা আল আসলামিয়া (রহ.)-এর নামানুসারে প্রস্তাবিত।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি:
১. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়ায় পৃথক, নিরাপদ ও পর্দাবেষ্টিত কর্নার স্থাপন।
২. খাবার গ্রহণের উপযোগী ধর্মানুগত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৩. মানবিক ও বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস পরিবেশ প্রতিষ্ঠা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “বিষয়টি ইতিমধ্যেই এস্টেট অফিসে পর্যালোচনার জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা ইতিবাচক ছিল, কোনো হতাশাজনক বার্তা দেওয়া হয়নি।”
আরও পড়ুনঃ সাভারের আশুলিয়ায় একদিনে তিন সন্ত্রাসী ঘটনা: আতঙ্কে এলাকাবাসী
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়—যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ—ইতোমধ্যে পর্দা কর্নার বাস্তবায়ন করেছে। তাই মাভাবিপ্রবিতেও এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিলম্ব কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
পর্দা পালনকারী নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় অনুশীলনের স্বাধীনতা থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগের সুযোগ সীমিত। তারা প্রত্যাশা করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত তাদের এই দাবি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে একটি মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
এই দাবির দ্রুত বাস্তবায়নে প্রশাসনের সদিচ্ছাই হতে পারে মানবিকতা ও বৈষম্যহীনতার পথে এক বড় পদক্ষেপ।