তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ‘মানুষ হবো’—এই স্বপ্নেই সে এগিয়ে চলে। নিজের সৃষ্টি দিয়ে ছুঁতে চায় মানুষকে, বদলে দিতে চায় সমাজ ও পৃথিবীকে। এমন এক সৃষ্টিশীল স্বপ্নযাত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান। ওয়াটারএইড বাংলাদেশ আয়োজিত 'পথে হল দেখা' শিরোনামের জাতীয় প্রতিযোগিতায় ‘গল্প লেখা’ ক্যাটাগরিতে দেশের সেরা ১০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদরে।
রবিবার (২৯ জুন) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ আয়োজনের পেছনে ছিল ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, কিম্বার্লি-ক্লার্ক এবং সুইডেন সরকারের যৌথ উদ্যোগ।
প্রতিযোগিতাটি তিনটি বিভাগে—শিশুদের ছবি আঁকা, গল্প লেখা ও সোশাল কন্টেন্ট নির্মাতা—এই ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের ‘গল্প লেখা’ বিভাগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জমা পড়া শতাধিক গল্পের মধ্যে থেকে বাছাই করে ৩৫টি গল্প এবং পরে ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজকরা জানান, এই গল্পগুলোর ভিত্তিতে শর্ট ফিল্ম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মারুফের লেখা গল্পের মূল প্রতিপাদ্য ছিল পানির অপরিহার্যতা এবং জীবনের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক। নিজের গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই গল্পটা মূলত সংগ্রামের, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের, এক প্রাণীর বন্ধুত্বের, এক মায়ের, এক ভাইয়ের। এটাও একধরনের প্রতিবাদ—জীবনের পক্ষে, পানির পক্ষে।”
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে মারুফ বলেন, “এটা যেন অলীক স্বপ্ন। আমি নিজের চেয়ে বেশি আনন্দ পাচ্ছি শুভাকাঙ্ক্ষীদের খুশি দেখে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, “সফলতার কোনও নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। আমরা সবাই শিখছি, পথ চলছি। এই অর্জন আমার জীবনে নতুন কিছু শেখার জানালা খুলে দিয়েছে। আর এই সুখ অনুভবে কোনও বাধাকেই বাধা মনে হয়নি।”
প্রেরণা হিসেবে মারুফ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন তাঁর পরিবারকে। বলেন, “যাদের মাধ্যমে আমি ‘আমি’ হয়ে উঠেছি—তারাই আমার অনুপ্রেরণা। আমার মা-বাবা আমার স্বপ্নের শক্তি।”
আরও পড়ুনঃ থমকে কেন ‘পর্দা কর্নার’ উদ্যোগ: শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি কখনও সুযোগ পাই, তবে নিজের কাজের মাধ্যমে আমাদের এই মা-মাটিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই।”
নবীনদের উদ্দেশে বার্তায় মারুফ বলেন, “আমাদের সমাজের তরুণরা আজ নানা কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। হতাশা আমাদের গ্রাস করছে। অথচ চোখের সামনে অনেক ভালো কাজ পড়ে থাকে—সেগুলোতে অংশ নিতে হবে। নিজের হৃদয়কে প্রশ্ন করুন—কোন কাজে আনন্দ পান? সমাজ, দেশ এবং নিজের কল্যাণে সেই কাজটিই করুন।”
তরুণ প্রজন্মের মাঝে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এই অর্জন মারুফের নয় শুধু—এটি ইবির জন্যও এক গৌরবের মুহূর্ত। সৃষ্টিশীলতা, দায়বদ্ধতা আর মানবিক চেতনার মেলবন্ধনে গড়া তাঁর পথচলা যেন অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকে।