spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ইবির জুলাই বিরোধীদের শাস্তি চায় বিএনপিপন্থী শিক্ষকবৃন্দ

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকায় থাকা ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩৩জন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত...
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসফুটবল খেলায় মারামারি; সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের দফায় দফায় মারধর 

ফুটবল খেলায় মারামারি; সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের দফায় দফায় মারধর 

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থী কর্তৃক কর্মরত সাংবাদিকদের উপর দফায় দফায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পর ও তলপেটে লাথি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে বিকাল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তোভোগীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহ এবং একই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আজকালের খবরের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম এবং একই বর্ষের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বার্তা২৪ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নূর ই আলম।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র ও জুনিয়ররা। এসময় মারামারির ভিডিও করতে গেলে আরিফ বিল্লাহর (সাংবাদিক) মোবাইল কেড়ে নেন তাদের অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনা। এক পর্যায়ে সাংবাদিককে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন বিভাগটির অন্য শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের কয়েকজন ঠেকাতে গেলেও সাংবাদিকদের উপর দফায় দফায় মারধরের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার পরবর্তীতে সেখানে অন্য সাংবাদিকরা সমাধানের জন্য গেলে তাদের সাথেও বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক উত্তেজিত হয়ে এক শিক্ষার্থীর উপর তেড়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘আমি হট্টগোলের আওয়াজ শুনে মাঠের দিকে এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছে। তার পাশে আরেক সাংবাদিক ভিডিও করতে গেলে তাকেও ভিডিও বন্ধ করতে বলা হয়। ভিডিও বন্ধ না করায় তাকে এসে লাথি মারে।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ জানান, ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বনাম ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলা চলছিলো। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মারামারি চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে আমি মোবাইল নিয়ে ভিডিও করা শুরু করি। তৎক্ষণাৎ অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের আফসানা পারভীন তিনা আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। আমি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে একই বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, পান্না ও একই বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ আরও ৮/১০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে চর, থাপ্পর, ঘুষি মারতে থাকে। পরে সাংবাদিক নূর ই আলম এসে মারধরের ভিডিও করলে তাকেও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী মারধর করে। এসময় সমন্বয়কসহ অন্যান্য সাংবাদিক উদ্ধার করতে আসলে ফের মারধর করে। এছাড়া সাংবাদিক রবিউল ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তাকে তলপেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।

তিনি আরও জানান, ওরা আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে কিন্তু এখনো ফেরত দেয় নি। পেশাদারি কাজে বাঁধা প্রদান এবং মারধরের ঘটনায় হামলাকারীদের যথাযথ বিচার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভুক্তভোগী নূর ই আলম বলেন, আমি প্রতিদিনের মতো আজকেও মাঠে ফুটবল খেলতে আসি। এসময় অর্থনীতি বিভাগের দুই পক্ষের খেলা চলছিলো। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হলে সাংবাদিক আরিফ তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে একজন মোবাইল কেড়ে নেয় ও তাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘিরে কিল, ঘুষি মারে। তৎক্ষনাৎ আমি মোবাইল দিয়ে ভিডিও অন করে ঘটনাস্থলে গেলে আমাকেও মারধর করে। এসময় অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মিনহাজ ও একই ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ ১০/১৫ জন আমাকে কিল, ঘুষি ও ঘাড়ে আঘাত করে। এসময় সমন্বয়ক সুইট ও রব্বানী ভাই হামলা থেকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রবিউল জানান, আমি বিকাল ৫টার সময় অফিসে অবস্থান করছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্ত:সেশন ফুটবল খেলা চলছিলো। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মারামারির ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ হামলার শিকার হন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে গেলে দেখি আরিফ বিল্লাহকে তারা ঘিরে রেখেছে। ওই সময় ভিডিও ধারণের প্রস্তুতি নিতে থাকলে কয়েকজন এসে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার জন্য উদ্যত হয়। আমি বলেছিলাম ‘আমি সাংবাদিক এভাবে আপনারা চার্জ করতে পারেন না।’ তখন কয়েকজন ‘তার মোবাইল কেড়ে নে, ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে’ বলে চারদিক থেকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারে। বিশেষ করে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ ইসলাম আমার তলপেটে লাথি মারে। তখন আমি মাটিতে পড়ে যাই। এসময় সমন্বয়ক সুইট, রব্বানী ভাইসহ কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে।

সাংবাদিক রবিউল আরও জানান, এর আগে গত ২০ এপ্রিল একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন নাহিদ।

পেশাদারি কাজে বাঁধা প্রদান এবং মারধরের ঘটনায় প্রশাসনের নিকট যথাযথ বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ ইসলাম সাংবাদিককে তলপেটে লাথি মারার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো সাংবাদিককে মারিনি। বরং আমাকে কোনো এক সাংবাদিক বুকে আঘাত করছে। বুকের ব্যাথায় এখন কথা বলতে পারছি না।’

আরও পড়ুনঃ ইবিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা, শাখা ছাত্রদলের প্রতিবাদ

আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনাকে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি।

অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশনখেলা ছিল। শুনেছি সেখানে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে ঠিক কি হয়েছে জানি না। বিষয়টি নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে এ বিষয়কে নিয়ে ছাত্রীকে মারার অভিযোগ তুলে ইস্যু তৈরী করে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত চিকিৎসক জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে প্যানিক অ্যাটাকে এমন হতে পারে।

ছাত্রীকে মারধরের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে নিবৃত করি। লিখিত অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, সাংবাদিকদের অবমাননা করা উচিত হয়নি। প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করলে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ছাড় দেয়া হবে না। সাংবাদিকদের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় ভালো আছে। সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব সম্মানের সাথে পালনের সুযোগ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনেরও সহযোগিতা করা উচিত।