
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হল পুকুর থেকে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ উদ্বার ও মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে প্রশাসনের গাফিলতিতে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ নানা দাবিতে প্রশাসনের প্রহসন বন্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ১৭৫ একর ।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে আবাবিলের ঝাঁকের মত জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনে অংশ নেন।
এসময় তারা প্রশাসনের নিকট ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। আন্দোলনের তোপের মুখে আগামী ৬ দিনের মধ্যে দাবিমূহ বাস্তবায়ন ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাছাড়াও তাদের হাতে বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। পাশেই থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পরও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স না আসায় ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই।
তারা আরোও বলেন,’লাশ শনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।’
বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে সাজিদ আবদুল্লাহ’র গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবন ঘেরাও, দাবি সংবলিত দেয়াল লিখন ও প্রধান ফটক অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাজিদের মৃত্যুর দ্রুত তদন্ত ও প্রতিবেদন প্রকাশ, সিসিটিভির আওতায় ক্যাম্পাস, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন, হলে মনিটরিং ব্যবস্থা, নিরাপত্তাবেষ্টিত নির্মাণ, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ, তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিসহ প্রশাসনের নিয়মিত উপস্থিতি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এসময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দাবি সম্বলিত কাগজ স্বাক্ষর করেন উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল।
এদিকে গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থী সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন কর্তৃক পাঁচ সদস্যের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
জানা যায়, আজ দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। এছাড়া জিয়া হলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় এলাকায় লাইটিংয়ের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত আমিরের খোঁজখবর রাখছেন
এদিকে আগামী ২০ জুলাই শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে একদিনের শোক পালন ও বাদ যোহর তাঁর রুহের মাগফেরত কামনা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে প্রশাসন। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সকলকে কালো ব্যাচ ধারণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস এবং ঘোষিত পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। দেশের বাইরে থাকায় সরাসরি আমি উপস্থিত থাকতে না পারা আমার জন্য দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পরপরই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমি বলেছি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে যতদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করছে সেগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সাড়ে ৬ টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে ইবি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ৮টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সুতপা রায় উদ্ধারকৃত লাশকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জানান, পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, সাজিদ একজন দক্ষ সাঁতারু ছিলেন। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। সাজিদের অকাল মৃত্যুতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, খেলাফত ছাত্র মজলিস, ছাত্র ইউনিয়ন জিয়া পরিষদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী গভীর শোক প্রকাশ করে প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানান।