তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,'প্রশাসনের কোথাও আর্থিক দৈন্যতা নেই, দৈন্যতা আছে যথাযথ ব্যবহারে। বিগত প্রশাসন জিনিসগুলো যথাযথ ব্যবহার করেনি ও এর জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এখন আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতাসহ নানা মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হয়- ‘প্রশাসন এতো এতো টাকা কী করে?’ আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছতা ও সততার সাথে কাজ করার বলে মন্তব্য করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কোষাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম।
রবিবার (২০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনফারেন্স রুমে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন কালে তিনি এসব বলেন।
সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,'প্রশাসনের কোথাও আর্থিক দৈন্যতা নেই, দৈন্যতা আছে যথাযথ ব্যবহারে। বিগত প্রশাসন জিনিসগুলো যথাযথ ব্যবহার করেনি ও এর জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এখন আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতাসহ নানা মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হয়- ‘প্রশাসন এতো এতো টাকা কী করে?’ আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছতা ও সততার সাথে কাজ করার।'
এছাড়া তিনি বলেন,'বাস্তবতা হলো সাজিদের মৃত্যুর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আগে হল কর্তৃপক্ষ থেকে কোথায় কি প্রয়োজন তা জানায়নি। আমাদের জায়গা থেকে কোনো গাফিলতি ছিলো না বরং কমিনিউকেশন গ্যাপ হওয়ার কারণে কিছু কিছু ঘাটতি হয়েছে। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে।'
উপ-উপাচার্য (রুটিন ভিসি) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, '৫ আগস্টের পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সীমিত আকারে বাজেট দেয়। কিন্তু বিশেষ দিবসসমূহে আমাদের আলাদা বাজেট রাখতে হয়। যেহেতু আমাদের বাজেট কম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। তবুও আমরা গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছি।'
তিনি আরো বলেন,'আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সাজিদকে হারিয়েছি, এ ঘটনায় কোনো রহস্য থাকলে তা বিহিত করতে আমরা খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আমাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা- ঘটনা প্রবাহের তথ্য উদঘাটন করা। তবে কাউকে বিচার করা, ফাঁসি দেওয়া বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা নেই। এটা সম্পূর্ণ পুলিশবাদী কেস। আমরা সর্বোচ্চ পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি। যদি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয়, তা যদি ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও হই, তাহলে আমি আমার শাস্তি চাইবো। ধৈর্য্য ধারণ করুন, আমরা শক্তভাবে এইটা হাতে নিয়েছি।'
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তে কমিটিতে দুইজন শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখার জন্য আলোচনা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান ও দ্রুত সম্পন্নের কথা জানান প্রশাসন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, প্রেস ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তিন সংগঠনে কর্মরত অন্য সাংবাদিকবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষার্থী মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু, তথ্য চেয়ে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন।
অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এদিকে মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ ১৫ দফা দাবিতে ১৯ জুলাই ক্যাম্পাসে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ও ৬ দিনের মধ্যে তাদের দাবিসমূহ বাস্তবাশনের জন্য আবেদন করেন।
দাবিসমূহ হলো পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও চালু রাখা এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্তত ১৫টি দাবি তুলে ধরেন। পরে কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিতভাবে আশ্বাস পাওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবিগুলো ৬ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করা হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।