তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হল পুকুর থেকে শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধারের পর থেকে তার মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। লাশ উদ্ধারের আগের রাত (বুধবার) এগারোটায় শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর পাড়ে সাজিদের জুতা দেখার দাবি করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদিন লাশ উদ্ধারের সময়ের পোশাকেই বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে সাজিদকে। এছাড়া ফুটবল খেলার পর বিকেল চারটার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে এক শিক্ষার্থীর সাথে কথাও বলেন তিনি। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া না গেলেও তার ফোনে কল করা হলে কয়েকবার ফোন রিসিভ হয়। এদিকে লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের ফোনটি তার কক্ষ থেকে পাওয়ার দাবি করেছেন তার বন্ধু।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
সাজিদের পার্শ্ববর্তী রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, লাশ উদ্ধারের পূর্বের দিন (বুধবার) বিকেল তিনটায় বৃষ্টিতে ভিজতে বের হন সাজিদ। এরপর বৃষ্টির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে ফুটবল খেলতে দেখা যায় তাকে।
এসময় সঙ্গে থাকা অন্য খেলোয়াড়রা জানান, প্রায় সোয়া চারটা পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন তারা। খেলার সময় সাজিদের পড়নে যে পোশাক ছিলো সেই পোশাকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে একই পোশাকে ফুটবল খেলার পর তাকে জিয়া মোড়ে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও জিয়া মোড়ের দোকানী আব্দুল আলীম। এসময় তার শরীর বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় ছিলো। এরপর থেকে আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি সাজিদের।
এদিকে বুধবার রাত এগারোটার দিকে পুকুর ঘাটে এক জোড়া কালো জুতা দেখেন সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধু বুধবার রাতে পুকুর পাড়ে আড্ডাকালে পাড়ে একজোড়া কালো জুতা দেখি। তখন এটা কেউ একজন নিয়ে নে বলেও পরস্পরের সাথে দুষ্টামি করি। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। লাশ উদ্ধারের সময়ও সেখান থেকে সেই জুতা জব্দ করা হয়। এসময় সেগুলো সাজিদের জুতা বলে নিশ্চিত করেন তার বন্ধুরা।
এদিকে বুধবার বিকেলের পর সাজিদকে আর তার কক্ষে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন তার পাশের কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিকে সেদিন তার রুমমেটরা কেউ হলে ছিলেন না বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ ইবিতে কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের
এদিকে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সাজিদের ফোনে কল দেয়া হলে তার কয়েকজন বন্ধুর কল রিসিভ হয় বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। তবে অন্য পাশ থেকে কোন কথা আসেনি। পরবর্তীতে সাজিদের লাশ উদ্ধারের পর তার কক্ষ থেকে সেই ফোন উদ্ধারের দাবি করেছেন তার বন্ধু ইনসান। তিনি বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য আমার এক জুনিয়রের মাধ্যমে তার কক্ষ থেকে ফোনটি নিয়ে আসি।’ তবে লাশ উদ্ধারের আগে কিভাবে ফোন রিসিভ হলো তা নিয়ে চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ময়নাতদন্তের আনুমানিক ৩০ ঘন্টা আগে সাজিদ মৃত্যুবরণ করেছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ময়নাতদন্ত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৃতদেহের সংরক্ষিত অঙ্গের রাসায়নিক বা বিষতাত্বিক পরীক্ষার ফলাফল (ভিসেরা রিপোর্ট) আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে ৪টার দিকে সাজিদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় সম্পর্কে জানার পর একে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিকেল ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৭দফা দাবি উত্থাপন করে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। দাবিগুলো হলো- পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো, বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা, ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ন্যুনতম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে প্রশাসনের ক্ষমা চাওয়া এবং ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুততম সময়ে প্রদানের তাগিদ দেওয়া। এসময় দাবি না মানলে ক্যাম্পাস কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া আগামীকাল আবারো অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, আমরা তদন্তের অগ্রগতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে এবং উপ-উপাচার্যের সঙ্গে বসার জন্য বললেও তারা সাড়া দেয়নি।
উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, অতি দ্রুত সঠিক কারণ উদঘাটন করতে পারবো বলে আশা করি। যেহেতু তার বাবা একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই এ বিষয়ে পুনরায় মামলা করার পরিকল্পনা নেই। আমরা তার পরিবারের করা মামলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।