তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে ফের আন্দোলন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট দিতে না পারলে প্রশাসনকে গদি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ২ টার দিকে ঘটনাস্থলে উপাচার্য অধ্যাপক ড নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এসে আগামী সপ্তাহের রবিবার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া আশ্বাস দিলে আন্দোলন শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা 'পারলে আজই রিপোর্ট দে, নইলে গদি ছাইড়া দে; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, প্রশাসনের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশান; প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না; আমার ভাই কবরে, প্রশাসন কী করে’; আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই; ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’; উই উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; বিচার বিচার বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও আমাদের প্রশাসন এখনো ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। সাজিদের লাশ ভেসে ওঠার পরেও সেদিন প্রশাসনের কাউকে পাওয়া যায়নি। গত শনিবার শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সাজিদের মৃত্যুর ব্যাপারে কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি। প্রশাসনের টালবাহানা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যদি আজকের মধ্যে প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করে তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেছি, অগ্রগতির ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেছি। সাজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য বিষয়ে আমাদের কানেক্ট করতে হয়েছে। সাজিদের সুরতহাল রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ভিসেরা রিপোর্ট এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ভিসেরা রিপোর্টের ব্যাপারে আমরা তাগাদা দিয়েছি, আজকে বিকালে অথবা আগামীকাল আমরা সেটি হাতে পাব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিব।
আরও পড়ুনঃ কুবির প্রধান ফটকে ‘কুকসু চাই’ দেয়াল লিখন ঘিরে বিতর্ক ও সমালোচনা
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘সাজিদের মৃত্যুতে তোমাদের মত আমি সমভাবে ব্যথিত। তোমাদের মতো আমিও জাস্টিস চাই। প্রশাসন সাজিদের মৃত্যুকে কোনোভাবেই ধামাচাপা দিতে চায় না, এই নিশ্চয়তা তোমাদের দিচ্ছি। এ কমিটি যদি মৃত্যু রহস্য বের করতে না পারে তাহলে সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানো হবে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করানো হবে। প্রয়োজনে আমরা পিবিআইকে দায়িত্ব দেব। আমি সামান্যভাবেও এটাকে ছেড়ে দেব না, আমরা এর শেষ দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের বলেছি। তোমাদের উত্থাপিত দাবি অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। ক্যাম্পাসে এসেই আমি তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ডিআইজি সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে, তাকেও অতিদ্রুত ভিসেরা রিপোর্ট দিতে বলেছি। ভিসেরা রিপোর্ট আসার পরেই তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান, ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।