তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ৬ বছরের ছোট্ট নাঈমকে সুশিক্ষার পথে এগিয়ে নিতে মানবিক ভূমিকা রেখেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্রিকেট ক্লাব। ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে নাঈমকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।
জানা গেছে, নাঈমের বাবা অন্তর দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় মা নুপুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। আর ছোট্ট নাঈম বেড়ে উঠছে তার নানী হাজেরা খাতুনের কাছে, যিনি ইবি ক্যাম্পাসের একটি দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে শিশুটি বিদ্যালয়ে যেতে পারছিল না।
বিষয়টি জানতে পেরে ইবি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি শেখ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ক্লাবের পক্ষ থেকে নাঈমকে শিক্ষার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তাকে ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করা হয়। ক্লাব থেকে নাঈমের প্রয়োজনীয় বই, ইউনিফর্ম ও এক মাসের অগ্রিম বেতনও পরিশোধ করা হয়।
নাঈমের নানী হাজেরা খাতুন বলেন, “অর্থের অভাবে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। পরে ক্যাম্পাসের এই মামারা আমাকে আশ্বস্ত করেন যে ওকে ভর্তি করাবেন। এখন নাঈম স্কুলে যাচ্ছে, আমি খুব খুশি। চাই ও যেন পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হয়।”
ছোট্ট নাঈম হাসিমুখে বলে, “বড় ভাইয়েরা আমাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে। আমি অনেক খুশি। আমি লেখাপড়া করবো।”
আরও পড়ুনঃ রাজপাড়ায় প্রশাসনকে উপেক্ষা করে অবৈধ বহুতল ভবন, প্রতিবাদ দমাতে রাতের আঁধারে হামলা
ইবি ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমাদের প্রতি সমাজের কিছু প্রত্যাশা থাকে—শুধু শিক্ষায় নয়, মানবিক দিকেও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য শুধু একটি শিশুকে স্কুলে পাঠানো নয়, বরং তাকে সম্মানজনক জীবনের পথে এগিয়ে দেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি শিশুর মধ্যেই ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে—শুধু দরকার একটি সুযোগ, আর সেই সুযোগটাই দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।”
সংগঠনের সভাপতি শেখ সাকলাইন বলেন, “ইবি ক্যাম্পাসে ছোট্ট নাঈম আমাদের খুবই পরিচিত। সে আমাদের মাঠে খেলতে দেখলে প্রায়ই ছুটে আসে। তাকে আমরা খুব ভালোবাসি, মাঝে মাঝেই কিছু কিনে দিই। একদিন তার নানী জানান, ওকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। তখন আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিই যে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করব। আমরা শুধু খেলাধুলায় সীমাবদ্ধ নই, বরং সুযোগ পেলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, নাঈম একদিন বড় হবে এবং দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে। তার সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।”
ইবি ক্রিকেট ক্লাবের এই মানবিক উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মানবিক চেতনাকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।