সায়মা আনান প্রমি, খুবি প্রতিনিধিঃ বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা, চিরচেনা কোলাহল আর ধোঁয়া ওঠা কাপ—রিফাতের বিকেলের স্বাভাবিক মুহূর্ত আচমকাই রূপ নেয় ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত চা খাচ্ছিলেন তপন দাদার দোকানে। এ সময় একটু দূরে ৪-৫টি কুকুর নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। হঠাৎই এক কুকুর ছুটে এসে রিফাতের পায়ে কামড়ে দেয়। নিরাপত্তা শঙ্কায় খুবির শিক্ষার্থীরা।
রিফাত বলেন, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি কুকুর আমার পায়ে কামড়ে দেয়। রক্তপাত হচ্ছিল। বন্ধুরা দ্রুত আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। ডাক্তার রেবিস ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন।”
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে (মার্চ-এপ্রিল) অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মধ্যেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বাড়তে থাকায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এতে করে জলাতঙ্ক বা রেবিস ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়া, ওয়াকওয়ে ও কটকা সংলগ্ন এলাকায় কুকুরের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী কুকুরদের খেতে দেন, যার ফলে তারা ক্যাফেটেরিয়ার আশেপাশে বেশি ভিড় করছে। এতে কুকুরদের মানুষকেন্দ্রিক আচরণ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।”
আরও পড়ুনঃ “যখন টাকা খাওয়া যাবে তখন শিক্ষক নিয়োগ দেবেন?” — প্রশ্ন ইবি শিবির নেতার
বিশেষ করে রাতের বেলায় একা চলাফেরার সময় শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। অপরাজিতা হলের বাসিন্দা পুষ্পিতা পূজা বলেন, “টিউশন শেষে হলে ফিরতে ভয় লাগে। কুকুরগুলো চিনতে না পারলেই তেড়ে আসে। দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আরিশমা দেবনাথ বলেন, “সব কুকুরের শরীরে রেবিস ভাইরাস থাকলেও, সব কুকুরের কামড়েই জলাতঙ্ক হয় না। তবে ঝুঁকি থাকায় ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি। প্রশাসন চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলেই ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কুকুর নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, ফলে ক্যাম্পাসে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, “আমরা কুকুর নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নিধনের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু উচ্চ আদালতের রিটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে কুকুরদের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকুরের নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক ঝুঁকি হ্রাসে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে—এমনটাই মত ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের।