
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২৪-২৫ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ক্লাসে প্রবেশ নিয়ে শাখা ছাত্রশিবির নেতাদের সাথে এক শিক্ষকের বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২ টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের ২০৫ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিবির প্রতিনিধির সাথে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ২০২৪-২৫ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ক্লাসরুমে প্রবেশ করেন ছাত্রশিবিরে অন্তত ৭/৮ জনের প্রতিনিধি দল। শিডিউল অনুযায়ী ক্লাস নিতে গিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী সাদা দলের আহ্বায়ক ও বিভাগটির অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান। তিনি শাখা ছাত্রশিবিরের কাছে জানতে চান তারা কেন এসেছে। এ সময় বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে এসেছেন বলে জানায় শিবির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষকের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ক্লাসের বাহিরেও হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, শিবিরের কিছু নেতাকর্মী আমাদের ক্লাসে ঢুকে তাদের সংগঠন সম্পর্কে বলছিলেন। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করে প্রথমে ওনারা (প্রতিনিধি) কারা জিজ্ঞেস করে এবং ‘গেট আউট’ বলে বের হতে বললেন। তখন শিবিরের নেতাকর্মীরা জানান বিভাগীয় সভাপতির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এসময় স্যার বলেন, ‘এটা সভাপতির বিষয় না, এটা আমার ক্লাসের সিডিউল’। এরপর তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। পরে স্যার ক্লাস ক্যানসেল করে চলে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাস থেকে বের হয়ে প্রফেসর মতিনসহ শিবিরের সবাই করিডোরের দিকে যায়। ওখানে বিভাগীয় সভাপতি ছিলেন। প্রফেসর মতিন তাকে বলেন, ‘আমার ক্লাসের সময় এদের ঢোকার অনুমতি কেন দিয়েছেন?’ এরপর শিবিরের নেতাকর্মীরা বলা শুরু করে ‘স্যার আপনি এভাবে অপমান করে কেন বের করে দিলেন? একটা সংগঠনের সেক্রেটারিকে এভাবে গেট লস্ট বলতে পারেন না।’ এ সময় শিবিরের কয়েকজন প্রফেসর মতিনকে জেরা করেন। প্রফেসর মতিন বলেন, ‘তোমরা কোন সংগঠনের সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার দেখার বিষয় যে তোমরা ছাত্র।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক শিবির নেতা বলেন, ‘আমরা প্রায় ৭/৮ জনের মতো বিভাগে গিয়েছিলাম। আমরা জানতাম না ক্লাস ছিল। বিভাগের সভাপতির অনুমতি ক্রমে গিয়েছি। সভাপতি যদি জানাত ক্লাস আছে, তাহলে আমরা যেতাম না। আমরা ৫/৭ মিনিটের মতো আলোচনা করেছি। তখন প্রফেসর মতিনুর রহমান স্যার ক্লাসে ঢোকেন। তিনি উচ্চস্বরে বলেন, তোমরা কারা? এখানে কেন? এ সময় শিবির সেক্রেটারি ইউসুফ বলেন, আমরা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে এসেছি। তখন স্যার বলেন ক্লাসের সময় এখানে কি? এখনই বের হয়ে যাও। তখন শিবির সেক্রেটারি স্যারকে জানান, আমরা চলে যাচ্ছি।’ পরে বিভাগের সভাপতি ও প্রক্টর স্যারের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ খুবিতে ‘সংবাদমাধ্যমে জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতা’ শীর্ষক সেমিনার
জানা গেছে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামের কক্ষে দুপুর ১টার দিকে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। বৈঠকে অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বেগম রোকসানা মিলি, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুব আলীসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী বলেন, ‘আমরা বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হইছিলো। মাঝখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টার সমাধান করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, শিডিউল অনুযায়ী বেলা ১২টার দিকে আমার ক্লাস ছিল। আমি শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার পর তাদের দেখি। চিনতামও না তারা আসলে কারা। পরে জানতে পেরেছি একটি ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে আসছে। আমি জানতাম না তারা অনুমতি নিয়েছে। বিভাগের সভাপতির উচিত ছিল তাদের অনুমতি দেওয়ার আগে কারো শিডিউল আছে কিনা সেটা দেখা। তবে তারা উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চেয়েছে। ক্ষমা চাওয়ার পর আসলে কিছু করার থাকে না। একজন শিক্ষকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে সেটা অপ্রত্যাশিত।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, আমি জানতাম না ওই সময়ে কারো ক্লাস আছে। ক্লাসের বিষয়টি জানলে আমি তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিতাম না। এটা একটু মিসটেক হয়েছে। পরে সবাইকে নিয়ে বসেছি। শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। তারা শিক্ষকের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে।