spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ছাত্রদল নেতা কর্তৃক নারীদের কটূক্তি, প্রতিবাদে ইবি ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ‘যৌনকর্মী’ বলে ছাত্রদল নেতার কটূক্তি, সারাদেশে নারী হেনস্তা ও ক্যাম্পাসগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে...
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসগুমের সাড়ে ১৩ বছর, তারা কি ফিরবে না আর!

গুমের সাড়ে ১৩ বছর, তারা কি ফিরবে না আর!

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী গুমের ঘটনার সাড়ে ১৩ বছর পেরোলেও তাদের সন্ধানে পরিবারের প্রতীক্ষা আজও শেষ হয়নি। গুম হওয়া শিক্ষার্থী দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মো. ওয়ালিউল্লাহ ও আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের আল মুকাদ্দাস। তাদের উদ্ধারের দাবিতে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে ধর্মঘট, মানববন্ধন করে আসছেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা।

তাদের কোথায় রাখা হলো, বেঁচে আছেন নাকি মেরে ফেলা হয়েছে- এসব প্রশ্নের জবাব আজও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কেউ দিতে পারেনি। এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি বলে সকলের প্রশ্ন তারা কি ফিরবে না আর? এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে পূর্বের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি পুনর্গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

এতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখকে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যের পুনর্গঠিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহম তরীকুল ইসলাম, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. ওবায়দুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম এবং কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট এসএম শাতিল মাহমুদ। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে আহ্বায়ক বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এই মুহূর্তে ঢাকায় আছি। রবিবার এসে কিভাবে কি করা যায় সে বিষয়ে ভিসি স্যারের সাথে প্রয়োজনে কথা বলবো।

জানা যায়, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রয়ারি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ঢাকা কল্যাণপুর থেকে হানিফ পরিবহনের এক বাসে উঠে ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাস। রাত সাড়ে ১১টায় বাসটি যাত্রা শুরু করে ও রাত ১টায় সাভারের নবীনগর পৌঁছলে গাড়িটি হঠাৎ থেমে যায়। সামনে থেকে র‍্যাব-৪ এর একটি কালো গাড়ি থেকে র‍্যাবের পোশাক পরিহিত ৮-১০ জন ও সাথে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন গাড়িতে উঠে। র‍্যাব ও ডিবি পরিচয়ে সিটে বসা যাত্রীদের মাঝ থেকে ওয়ালীউল্লাহ-মুকাদ্দাসকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

এ ঘটনার কয়েক দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আশুলিয়া থানায় জিডি ও পরে হাইকোর্টে রিটও করে মুকাদ্দাসের পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুম হওয়া অনেককেই উদ্ধার করা হয়েছে গোপন বন্দিশালা থেকে। তবে তাদের খোঁজ আজও মেলেনি।

এদিকে সন্তান ফেরার অপেক্ষায় সাড়ে ১৩ বছর ধরে দিন গুনছেন ওয়ালিউল্লাহর মা আসিফা রহমান ও বাবা মাওলানা ফজলুর রহমান। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পশ্চিম শৌলজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম। তিনি ইবিতে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। পাশাপাশি শাখা ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার পরিবার মনে করেন, সন্তানকে হয়তো হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ “পাথর মেরে মানুষ হত্যার ইতিহাস আর রচনা করতে চাই না” — চরমোনাই পীর

এছাড়া মুকাদ্দাস পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারী গ্রামের মাওলানা আবদুল হালিম ও আয়শা সিদ্দিকা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তিনি ইবির আল-ফিকহ অ্যান্ড বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও শাখা ছাত্রশিবিরের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নিখোঁজ মুকাদ্দাসের সন্ধানে ঢাকায় একাধিকবার ‘মায়ের ডাক’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তার পরিবার। কিন্তু কোনো সুরাহা পাননি তারা।

মুকাদ্দাসের বাবা বলেন, গুম বা নিখোঁজ হওয়া সন্তানের সন্ধান দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? সে আজও মৃত না জীবিত আমাদের জানার কোনো কী অধিকার নেই?

ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের আমির হাফিজুর রহমান বলেন, সাংগঠনিকভাবে মেধাবী হওয়ায় ক্যাম্পাসে নেতৃত্বশূন্য করতে ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাসকে গুম করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রয়ারি ঢাকার নবীনগর থেকে রাত ১টায় র‍্যাব ও ডিবি পরিচয়ে ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাসকে গুম করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে ১৩ বছর পেরোলেও তাদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।