
ডালিয়া হালদার, ববি প্রতিনিধিঃ তীব্র পরিবহন ও জনবল সংকটে দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী ৩ রুট ও নতুন যুক্ত হওয়া ৩ রুটে মোট ২৪টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ১৩টি, ভাড়া করা বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস ৮টি ও একতলা বাস ৩টি। তবে এর মধ্যে ধানসিঁড়ি নামে একটি বাস অচল অবস্থায় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চালক রয়েছেন মাত্র ১১ জন এবং হেল্পার ৮ জন। ফলে হেল্পার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শাখার কর্মচারীদের দিয়েই অনেক সময় গাড়ি চালাতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর ৮০ শতাংশই আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত। অনেককে বাধ্য হয়ে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়, আবার অনেকের টিউশনি করতে শহরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিআরটিসি বাসগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে অনেক সময় ঠেলে বাস চালু করতে হয়, আবার চলন্ত অবস্থায়ও বন্ধ হয়ে যায়। ছাদের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে সিট ভিজে যায়, আর অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে খুব ধীরে চলতে হয় বাসগুলো। একই বাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওঠা অনেক সময় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিও তৈরি করছে।
পরিবহন পুল সূত্রে জানা যায়, ইউজিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫টি গাড়ি কেনার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে (২০২৫) পর্যন্ত রয়েছে মাত্র ২৫টি। এর মধ্যে বাস ১৩টি, মাইক্রোবাস ৫টি, জিপ ২টি, কার ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি ও মোটরসাইকেল ৩টি। করোনা মহামারীর পর থেকে নতুন কোনো বাস বরাদ্দ হয়নি। বর্তমানে পরিবহন কেনার জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাজেট থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী বাস কেনা যাচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিয় মণ্ডল বলেন, “নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পরিবহন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। অথচ সীমিত ও জরাজীর্ণ বাসে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। দাঁড়িয়ে যাতায়াতের মতো পরিস্থিতি যেন না হয়, সেটি আমাদের ন্যায্য দাবি।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন হাওলাদার বলেন, “বাসের সংকটে আমাদের প্রায়ই অটো কিংবা পিকআপে যেতে হয়। পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন বাস দরকার। এতে অনেক শিক্ষার্থী বাসা থেকে যাতায়াত করে পড়াশোনা চালাতে পারবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, ২৮ সিটের বাসে কখনো ৫৬–৫৮ জন যাত্রী উঠেন। এতে ওভারলোড হয়ে গাড়ি চালাতে হয় খুব সতর্ক হয়ে। নতুন বাজার রুটের অবস্থা আরও করুণ, শিক্ষার্থীরা ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করছেন। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের জন্য কমপক্ষে ৩০ জন চালক দরকার।
আরও পড়ুনঃ দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা এলাকায় মিজান-রায়হান আতঙ্কে
এ বিষয়ে পরিবহন পুলের নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রান্সপোর্ট) মো. জাহিদ হাসান জানান, বিআরটিসি বাসগুলোর মেরামত ও চালকের দায়িত্ব তাঁদেরই। পরিবহন পুলের ম্যানেজার মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সব যানবাহন সংযুক্ত হয়নি। তাই ভাড়াকৃত ও নিজস্ব বাসের সমন্বয়ে সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ইতোমধ্যে একটি বিআরটিসি বাস যুক্ত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও দুটি বাস আসবে। নতুন ৩টি দূরপাল্লার রুটও চালু করা হয়েছে।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম দাবি করেন, পরিবহন সংকট সমাধান করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে।
উল্লেখ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবহন সংকট নিরসনের দাবিতে টানা ৩৭ দিন আন্দোলনের পর ৪ সেপ্টেম্বর সাত শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। পরদিন উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙা হলেও ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিবহন সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।