জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি এক মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি।
তদন্ত কমিটির দাবি, অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যেন ঘটনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত থাকলে বা কারো গাফিলতি থাকলে সে বিষয়ে পুরোপুরি বস্তুনিষ্ঠ একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হয়। ঈদের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কিছু এভিডেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে সময় লাগছে বলেও দাবি কমিটির সদস্যদের।
জানা যায়, গত ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন বাসায় আত্মহত্যা করেন জবি ছাত্রী অবন্তিকা। তার আগে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে আত্মহত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে দায়ী করেন। মুহূর্তেই সেই ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।
অবন্তিকার মৃত্যুর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে ঘটনার পেছনে জড়িতদের অতি দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত আছে কিনা সেটি তদন্তে পরদিন (১৬ই মার্চ) পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) এডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস রয়েছেন। কমিটির অন্যরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন এবং সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ।
আরও পড়ুনঃ অবন্তীকার আত্মহত্যা তদন্তে কুমিল্লায় জবির তদন্ত কমিটি
তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার কুমিল্লায় অবন্তিকার বাসায় গিয়ে তার মা-এর সাথে কথা বলার পাশাপাশি জেল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানকে জেল গেটেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক প্রক্টর এবং অবন্তিকার ১৫-২০ জন সহপাঠী সহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির সাথে ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেছে কমিটি। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ৮-৯ বার মিটিং করেছে কমিটির সদস্যরা।
অবন্তিকার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও মোবাইলের কিছু তথ্য চেয়ে পুলিশের কাছে কয়েকদফা যোগাযোগ করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা৷ তবে বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় এসব তথ্য পেতে দেরি হচ্ছে। কবে নাগাদ এসব তথ্য পাওয়া যাবে সেটি এখনো অনিশ্চিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আগে অনেক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে সেগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি একই রাস্তায় না হেঁটে দ্রুততম সময়ে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করুক আমরা সেটাই চাই।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও জবির আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এস মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিষয়টিতে জটিল রসায়ন জড়িত। তাড়াহুড়ো করলে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরী করা সম্ভব হতো না। আমরা ইতিমধ্যেই কুমিল্লা গিয়েছি কয়েক দিন,জেল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্যায়ের অনেকের সাথে কথা বলেছি। আমরা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াটি মোটামুটি গুছিয়ে এনেছি। আমাদের প্রতিবেদন লেখা চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, কারো কোন দায় রয়েছে কিনা সেটি আমরা ভালোভাবে খতিয়ে দেখছি।আমরাও এ বিষয়টি নিয়ে সমানভাবে ব্যথিত। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। তারাও কাজ করছেন। পুলিশের কাছ থেকে সমর্থনমূলক কিছু বিষয় আমরা চেয়েছি,তারা সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ীই সব কিছু করতে হবে। তাই কিছুটা সময় লাগছে।
আরও পড়ুনঃ অবন্তিকার আত্মহত্যার সুবিচারের দাবিতে আইন বিভাগের মানববন্ধন
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, পুলিশের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছি, তারা সেগুলো দিবে বলেছেন। তবে তাদের ভাষ্য এখনো তাদের কাছে সেই তথ্যগুলো নেই। সেই তথ্য কবে নাগাদ পাবো তার উপর এখন নির্ভর করছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়। তথ্যগুলো না পেলে সঠিক কারণ উদঘাটন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৬ মার্চ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে তার মা তাহমিনা বেগম কুমিল্লায় কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করে। মামলায় রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে আসামি করা হয়। কয়েকদফা রিমান্ড শেষে তারা দুইজন কারাগারে আছেন।