
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে যে নাম দেখলাম আগে বাংলায়, পরে আরবিতে ও শেষে ইংরেজিতে। ভাষা ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদারতা সারাদেশের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ বর্ষের তিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে সবত্র লেখার ক্ষেত্রে কোন ভাষায় আগে লিখবেন তা আপনার চরিত্র নির্ধারণ করে। বাংলা ভাষার যে দুর্দশা চলছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য হিসেবে আমরা এ দায় এড়াতে পারি না। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজি ভাষায় লেখা। বাংলাকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নামে যে দৈন্যতা তৈরি হয়েছে তা আমাদের বুঝা দরকার।
তিনি বলেন, আমি বাংলায় কথা বলছি। আমি তো জানি, আমি বাংলা ভাষাকে নতুন করে প্রাণ দেওয়ার জন্য কিছু বলছি না।পৃথিবীর সব দেশের ভাষায় শিক্ষা এবং জ্ঞান বিস্তারের মাধ্যম হয়ে গেলে সব মানুষের শিক্ষিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের দেশে যে এখনও শত শত মানুষ শিক্ষিত হতে পারেনি, তাদের জ্ঞানের আলো আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারিনি লিখিত রূপে, সেটার কারণ হচ্ছে আমাদের অর্থ জ্ঞানের অভাব, আমাদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য বইপত্রের অভাব।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের দেশে এখনও তো মৌলিক শিক্ষা মানে নিরক্ষরতা দূর হয়নি, কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্য লড়াই করি, তাদের সাথে মারামারি করি, অনেকের রক্তের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হয়। কিন্তু প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়নি সরকারের হাতে। এখনও সরকারি হিসেবেই আমাদের দেশের শতকরা ২৬ জন লোক নাম স্বাক্ষর করতে পারে না, যদিও স্বাক্ষরতা আর শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু কই? এদেশের প্রাইমারি শিক্ষা এবং সেকেন্ডারি শিক্ষা তার বিস্তার হয় নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় আমরা কিন্তু লেগেছি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুনঃ ইবিতে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক শাটলের যাত্রা শুরু
এসময় থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান ও সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্বিতীয় দিনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন ও অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী।
ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিথি ও নবীনদের ফুল ও ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনায় বরণ করে নেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তথ্য সম্বলিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।



