

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামকে চাকুরিচ্যুত করেছে প্রশাসন।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্যটি জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম ২০২৪ সালের ২১আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে উক্ত বিভাগে অনুপস্থিত থাকেন। তাঁর এই অনুপস্থিতির বিষয়ে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৯৭ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে অফিস স্মারক নং-১২৬/শিক্ষা/হবি-২০২৪/৬৬, তারিখ-০৩/১১/২০২৪ সম্বলিত পত্রে আগামী ০১ মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলে তিনি যোগদান না করে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম কর্মস্থলে যোগদান না করায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭ তম (সাধারণ) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে কি ধরণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অপরাধের মাত্রা নির্ধারণপূর্বক শান্তির ধরণ উল্লেখ করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৭০তম (সাধারণ) সভার ২৪ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৩ (জ) ধারা মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৪ (১)(গ) ধারা মোতাবেক গত ২১/০৮/২০২৪ তারিখ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী হতে তাঁকে অপসারণ (Removal from Service) করা হলো।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, "আমি নিজেও জানি না কোন কারণে অনুমতিবিহীন ছুটি বলছে। আমি ৫ বছরের লিভ বন্ড দিয়ে গবেষণার জন্য ইউএসেতে আসলাম। ১ বছর ছুটি ভোগের পর দ্বিতীয় বছরের ৩ মাস অতিক্রান্ত হলে বেআইনীভাবে প্রশাসন আমাকে ৩/১১/২০২৪ তারিখে ছুটি বাতিল করে যোগদান করতে বলে। আমি পুনরায় দরখাস্ত করলে সে বিষয়ে ১৮/৩/২০২৫ তারিখে চিঠি পাই যে, আমার ছুটির আবেদন মঞ্জর হয় নি এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বা তদন্ত কমিটি আমাকে কিছুই জানায় নি। আমি আশা করেছিলাম কর্তৃপক্ষ আমাকে চিঠি দিবে এবং যুক্তিসঙ্গত সময় দিবে। পরবর্তীতে ২৮/০৯/২০২৫ তারিখে পুন বিবেচনার আবেদন দেই এবং ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে ছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা বিবেচনা করেন নি। আমি এখন পর্যন্তও ইউএসেতে শিক্ষা ও গবেষণায় কর্মরত রয়েছি।"
আরও পড়ুনঃ ইবির আইন বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম চাকরিচ্যুত
তিনি বলেন, "প্রশাসনের পত্রটিও অসঙ্গতিপূর্ণ। তারা বলছে যে, ৯/১২/২০২৪ তারিখের ১৯৭তম স্ট্যান্ডিং কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ৩/১১/২০২৪ পত্রে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। এটা কি ঘোড়ার আগে গাড়ী নয়। ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখের সিদ্ধান্ততো আর নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে জানানো যায় না! তাই না? প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত বা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে আমাকে যোগদানের জন্য কোন পত্র বা শোকোজ করা হয় নি।"
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক জহুরুল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে এমএস ডিগ্রিতে ভর্তি আছেন। সেখান থেকে তিনি গত ২২ জানুয়ারি ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন নিয়মবহির্ভূতভাবে তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছুটির আবেদন করলেও মঞ্জুর করা হয়নি এবং তাকে না জানিয়েই বেতন বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছিলেন তিনি।