তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি মূল্যায়ন জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ নাম্বার ১০-এর মধ্যে ২.৪৫ পেয়েছেন উপাচার্য।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জরিপের মূল্যায়নে১০টি বিষয় রাখা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে অনলাইন গুগল ফর্ম এবং অফলাইনে প্রতিটি হল, বিভাগ ও ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
জরিপসূত্রে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত নেয় ইবি সংস্কার আন্দোলন। তাদের এই জরিপে মোট ১৩১২জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যাদের ৮৭৬ জন আবাসিক ও বাকি ৪৩৬ জন শিক্ষার্থী অনাবাসিক। অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষাবর্ষভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭-২৮ বর্ষের ৬জন, ২০১৮-১৯ বর্ষের ৮০ জন, ২০১৯-২০ বর্ষের ১৮১ জন, ২০২০-২১ বর্ষের ৩৪৫ জন, ২০২১-২২ বর্ষের ২৯৩ জন, ২০২২-২৩ বর্ষের ২৭৪ জন এবং ২০২৩-২৪ বর্ষের ১৩৩ জন মতামত দেন। জরিপে মার্কিং বা রেটিং ক্যাটাগরিতে খারাপ (১-৩), মোটামুটি (৪-৬), ভালো (৭-৮) ও অতি ভালো হিসেবে (৯-১০) নম্বর বণ্টন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত এক বছরে উপাচার্যের কার্যক্রমের আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর ১৫ দফা দাবি জানানো হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর ব্যাপারেও কোন অগ্রগতি হয়নি। উল্টো ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যে, অনুমতি ছাড়া কোনও ধরনের সভা সমাবেশ করা যাবে না।
তারা আরও বলেন, দাবি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ চাইলেও তা মেলেনি। তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এতে উপাচার্য ২.৪৫ পেয়েছেন, যা রেটিং অনুযায়ী খারাপ। অর্থাৎ বলা যায়, তিনি গত এক বছরের কার্যক্রমে অকৃতকার্য হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানিসংকট নিরসনে বাপার আলোচনা সভা
জরিপে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন গুলো হলো-১. সেশনজট নিরসনে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা তদারকি, সেশনজট ও পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট নিরসনে উপাচার্যের ভূমিকা কতটা কার্যকর হয়েছে?
২. সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে উপাচার্য কতটা সফল হয়েছেন?
৩. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও পরিবেশবান্ধব করতে উপাচার্যের পদক্ষেপ কতটা সন্তোষজনক ছিল?
৪. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনে উপাচার্যের ভূমিকা কতটুকু?
৫. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিকীকরণ তথা অনলাইন ব্যাংকিং, ল্যাব, সনদ উত্তোলন ও ওয়েবসাইটের আধুনিকায়নে উপাচার্যের ভূমিকা কতটা উন্নয়নমূলক ছিল?
৬. আবাসিক হলের খাবারের মান বৃদ্ধি ও মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
৭. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও তা সমৃদ্ধ করার জন্য উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
৮. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে উপাচার্যের ভূমিকা কতটা সন্তোষজনক?
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা, বিভাগগুলোতে ছাত্রী কমনরুম নিশ্চিত ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
১০. পরিবহন সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত বাস বরাদ্দ, ফিটনেসবিহীন বাস অপসারণ, দক্ষ চালক নিয়োগ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। পরদিন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ তার দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।