মো: আলিফ হোসাইন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হলে খাবারের কুপন বিতরণকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাসিফ ইকবাল পিয়ালের বিরুদ্ধে হল প্রভোস্টের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হল ফেস্টের অগ্রিম কুপন বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে।
হাউজ টিউটরদের বরাতে জানা যায়, কুপন বিতরণের নিয়ম ও সময়সূচি আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নাসিফ ইকবাল নিয়ম না মেনে সরাসরি অফিসে ঢুকে টোকেন দাবি করেন। উপস্থিত শিক্ষকরা ডকুমেন্টস আনতে বললে তিনি জানান, কোনো কাগজ বা মোবাইল ফোনই সঙ্গে নেই। নিয়ম অনুযায়ী প্রমাণপত্র ছাড়া কাউকে টোকেন দেওয়া সম্ভব নয় বলে শিক্ষকরা জানান।
এই সময় পিয়াল উচ্চস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সে শিবির করে, এখানে কেন?”—এমন মন্তব্য করে অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ তাকে শান্ত হতে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকের দিকে তেড়ে যান। উপস্থিত শিক্ষার্থী আলিম দ্রুত বাধা দিলে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিয়ালের আচরণ ছিল অশোভন ও শিক্ষার্থীসুলভ ভদ্রতার পরিপন্থী। প্রমাণপত্র না দেখিয়েই টোকেন দাবি করা এবং না দেওয়ায় উত্তেজিত আচরণ—দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
হল প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ বলেন, “শেখ রাসেল হলের অনেক শিক্ষার্থী আমার পরিচিত, কিন্তু পরিচিত হলেও কাউকে নিয়ম ভঙ্গ করে টোকেন দেওয়া হয়নি। আমি শিক্ষক হিসেবে কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই না। তবে শিক্ষকের দিকে তেড়ে আসা এক ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ। আব্দুল আলিম দ্রুত বাধা না দিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।”
আরও পড়ুনঃ হিন্দু যুবক কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষিত, প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ
আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম বলেন, “আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে টোকেন বিতরণের দায়িত্বে ছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী ডকুমেন্টস দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু পিয়াল জোর করে টোকেন দাবি করেন। প্রভোস্ট স্যার আপত্তি জানালে তিনি রেগে গিয়ে স্যারের দিকে এগিয়ে যান। আমি তখন দ্রুত বাধা দিই। পরে পিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান, যা সত্য নয়।”
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা নাসিফ ইকবাল পিয়াল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ঘটনাটি অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, পিয়াল অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছাত্রলীগের প্রচার ও জনমত গঠন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকেও ছাত্রলীগের নেতা রায়হান আহমেদ শান্তর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের সময় শেখ রাসেল হলের ৩১৬ নম্বর রুম পিয়াল ও তার বন্ধুরা অবৈধভাবে দখল করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে সেই রুমটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলগালা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকে।