
কুবি প্রতিনিধি: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক সংগঠন ‘উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদ’-এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে মশাল মিছিলটি মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। এতে কুবির উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা ‘তিস্তা বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’, ‘আমাদের তিস্তা, বুঝে নিবো হিস্যা’, ‘বাঁচাও তিস্তা বাঁচাও দেশ, তোমার আমার বাংলাদেশ’—এমন নানা স্লোগান দেন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দাবি জানান—তিস্তা নদী খনন ও প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর মূলধারা গভীর ও প্রশস্ত করা, আধুনিক ব্যারেজ ব্যবস্থা চালু করা, সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কৃষকদের পানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং নদীভিত্তিক কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন উন্নয়নকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করার। পাশাপাশি নদী তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বালু দখল ও দূষণ বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তারা।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, “আমরা একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে এসেছি। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও উত্তরবঙ্গের নদীগুলো বঞ্চিত থাকে। কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে হলে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে তুলতে হবে।”
কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরবঙ্গের সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশের সমস্যা। প্রয়োজনের সময় পানি আটকে রেখে আবার অপ্রয়োজনের সময় ছেড়ে দেওয়া হয়—এই আগ্রাসী নীতির অবসান ঘটাতে হবে।”
ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হারুন বলেন, “উত্তরবঙ্গে এখন আগের মতো ফলন হয় না। পানির অভাবে কৃষকরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছেন, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। উত্তরবঙ্গের কৃষককে বাঁচাতে না পারলে বাংলাদেশও বাঁচবে না।”
আরও পড়ুনঃ নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু চায় ইবি শিক্ষার্থীরা
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, “তিস্তা নদী বাংলাদেশের পাঁচটি জেলার কৃষি ও জীবিকার মূল ভিত্তি। বছরের পর বছর আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই সমস্যার সমাধান না হলে জনগণ আন্দোলনে নামবে।”
উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন বলেন, “তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের প্রাণ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কৃষক, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি। তিস্তার জলে জীবন ফিরিয়ে আনাই আমাদের সংগ্রামের শপথ।”
সংগঠনের সভাপতি নাইম আহমেদ বলেন, “তিস্তা সমস্যার সমাধান না হলে উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন থমকে যাবে। আমরা শুধু প্রতিবাদ করতে আসিনি, আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই। সরকারের প্রতি আহ্বান, ৭ দফা দাবি মেনে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন, তফসিল ঘোষণার আগেই।”