তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ শীঘ্রই দুঃখ ঘোচাতে যাচ্ছে ৩ মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চার বছর পার করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদল। জুলাই পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ও সংগঠনের গতিশীলতা ফেরাতে নতুন নেতৃত্বে তরুণ কর্মীদের অগ্রাধিকারের কথা ভাবছে সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় পদ প্রত্যাশী কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির রায়হান আহমেদ নতুন নেতৃত্বের জন্য কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহে ক্যাম্পাসে আসেন। এসময় যারা বিগত সময়ে নির্যাতিত, নিয়মিত, ছাত্রত্ব এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি জানান তিনি
জানা যায়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল প্যানেলের শোচনীয় পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ। একইসাথে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলকে সুগঠিত করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।
দলীয় সূত্রে, নতুন কমিটি দেওয়া হবে - এমন আশায় কমিটির ডজনখানেক পদপ্রত্যাশী বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই নিজেদের সিভি বা বায়োডাটা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিচ্ছেন।
বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট নিজেদের যোগ্য প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দলের দুর্দিনে কীভাবে তারা ভূমিকা রেখেছেন এবং জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় থেকেছেন, সেসবও তুলে ধরছেন অনেকে। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরই শীর্ষপদে দেখতে চায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আলোচনায় থাকা পদপ্রত্যাশী তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ (ফিন্যান্স ২০১৮-১৯), নুর উদ্দিন (ফলিত রসায়ন ২০১৮-১৯), সক্রিয় কর্মী আবু সাইদ রনি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২০১৭-১৮), রাকিব হাসান স্বাক্ষর (একাউন্টটিং ২০১৮-১৯), তরিকুল ইসলাম সৌরভ ( মার্কেটিং ১৮-১৯), রিফাত হোসাইন (ট্যুরিজম ১৯-২০), আলামিন হোসাইন (একাউন্টটিং ১৯-২০), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সাবেক সহ-সমন্বয়ক তৌহিদুল ইসলাম (একাউন্টটিং ১৯-২০), আরিফুল ইসলাম জনি (সমাজকল্যাণ ১৯-২০), মেহেদী হাসান ও রায়হান ইসলাম
(ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি ১৮-১৯) সাইফুল্লাহ মামুন (আল হাদীস ১৯-২০) অন্যতম।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির রায়হান বলেন, ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নতুন কমিটিও খুব দ্রুতই দেওয়া হবে। এবারের কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। যারা ত্যাগী, নিয়মিত ছাত্রত্ব এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদেরকে বেইজ করে কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করবো। যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করছি।
আরও পড়ুনঃ গাজীপুরে মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় নালিতাবাড়ীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
ছাত্র সংসদের বিষয়ে ইকসু গঠনতন্ত্র দ্রুত প্রণয়নের আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি নভেম্বরের মধ্যে ইকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হয়ে যাবে। ইকসুকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা কাজ করতে চাই, পূর্বে থেকে যেরূপ আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদের বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ আছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ইকসু নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা কোনো একক গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করবেন না।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৬ জুনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক ও ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্যসচিব করে ৩১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তবে আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাস হলেও চার বছর পার হয়েছে এ কমিটির। এতে কমিটির অধিকাংশ সদস্য নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত ও চাকরিজীবী। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় নেতারা দলীয় পদ আঁকড়ে থাকায় ক্যাম্পাসে কার্যক্রমে ধীরগতি রয়েছে।
এমতাবস্থায়, দলীয় নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের চাহিদারর কথা মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বদের দিয়েই ইবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।