
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝির এক নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ‘ইবিয়ান পরিবার IUian Family’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে আব্দুল্লাহ আল আসাদ নামে এক আইডি থেকে অডিওটি পোস্ট করা হয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ। অভিযুক্ত শিক্ষকও পরবর্তীতে অসাবধানতাবশত শব্দচয়নে ভুলের কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
অডিওতে শোনা যায়, সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত আন্দোলন পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া প্রসঙ্গে কোন এক শিক্ষার্থীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা আমার সাথে মিটিং করছে। মিটিং করার পরে প্রক্টরকে বললাম আমার এখানে সব ছাত্র-ছাত্রীরা আছে, আপনি আসুন। সেখানে অনেক রাত হয়ে গেছে, আর রাত হওয়ার পরেই ছেলেরা প্রক্টরকে বলে গেছে, স্যার, আমরা তো অনেক কাজ করছি। রাতের খাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। সে লিখছে সুইট নাকি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আন্দোলন বিক্রি করেছে। তাহলে আমি নাসির উদ্দিন সেখানে আছি। আমি ভিকটিম হলাম না?
এছাড়া সাজিদ ইস্যুতে আন্দোলনের বিষয়ে অডিওতে তিনি বলেন, কোথাকার কোন একটা মৃত পোলা, যাই হইছে, সে তো চলে গেছে। ল্যাংটা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে আরেক হাইওয়ান। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান। মরে গেছি মরে। আল-কোরআনের টিচার। আমি গেছি। আমার সাথে গেছে জিন্সের প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি মরে।
এছাড়া অডিওর শেষ দিকে এক শিক্ষার্থীকে তিনি বলেন, তোমার যদি ইচ্ছা হয় যাও, লড়ো সেখানে। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার হক আন্দোলনের, আমার জায়গা হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার তোমার নেই। এখন থেকে ক্লাস চলবে, পরীক্ষা চলবে, আন্দোলন চলবে, সবকিছু চলবে। ব্যাস, যাও। ঠিক আছে। এটার আমি বিভাগীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
অডিও প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ ঘটনায় সালমান খান মন্তব্যে লেখেন, একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে তিরস্কার করলে সেটি আর সুন্দর এবং মার্জিত হবে, যে যত জ্ঞানী সে তত বিনয়ী। সবচেয়ে বড় কথা আল কুরআনের মতো বিভাগের একজন শিক্ষক তার উপর বিভাগীয় প্রধানের বাক্যচয়ন থেকে আমরা কিছু শিখবো কিন্তু দুঃখের বিষয় এইখানে শুনে মনে হলো কোনো অশিক্ষিত গ্রামের মাতব্বর এর বক্তব্য শুনলাম।
রাইসা বিনতে রাশিদা লেখেন, লজ্জাজনক মন্তব্য এর জন্য দুঃখ চেয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে এই ভিডিও ওই সময় পোস্ট করার সাহস কেন হয়নি? উচিত ছিল ওইসময় পোস্ট করা
নুসরাত ঐশী লেখেন, একটু ভালো রেজাল্টের আশায় এরে যেসব অমানুষরা ডিফেন্ড করতে আসবে ওরা সাজিদের বিচার চায় কিনা সন্দেহ…।
ফাবিয়ান আরিফ লেখেন, মাই গড, এমন আচরণ হতে পারে একজন শিক্ষকের? এমন সাহস কোথা থেকে পায়? আসলে দোষ তাদের না দোষ আমাদের ছাত্রদের, আমরা চুপ করে থাকার জন্য তারা সাহস পায়।
মেহেদী হাসান ইমন লেখেন, যারা আন্দোলন করবেন অবশ্যই আল কুরআন ডিপার্টমেন্টের হতে হবে। না হয় প্রিয় স্যার আন্দোলন করতে দিবে না।
মেহেদী হাসান বাপ্পী লেখেন, শিক্ষকের এই ধরনের ব্যবহার কোনভাবে কাম্য নই। ইনিও শিক্ষক দুঃখজনক। কি শব্দ চয়ন। ছাত্রদের এই ভাবে শাসন করে কোন শিক্ষক।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহীতে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেত্রী ফাইজা গ্রেপ্তার
শরীফ উদ্দিন আমানউল্লাহ নামের একজন লেখেন, ঐদিন আমরা উপস্থিত ছিলাম। স্যার একজন শিক্ষার্থীকে ধমক দিয়েছে তা ঠিক। ঐ ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিপ্টের সকল শিক্ষার্থী স্যারের কাছে অভিযোগ করছে যে ঐ শিক্ষার্থীর আচার ব্যবহারে ডিপ্টের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। বারবার সে ডিপ্টের সিদ্ধান্তের বাহিরে কাজ করেছে। আল কোরআনের ছাত্র হয়েও সে যথাযথ আচরণ করেনি। এজন্যে তাকে ধমক দেওয়া হয়েছে। ঐদিনের ধমক যথাযথই ছিল। সকল ছাত্র উপস্থিত ছিল। সকল ছাত্রের চোঁখে সে অভিযুক্ত ছিল সে হিসেবে সম্মানিত চেয়ারম্যান স্যার সঠিক কাজ করেছে। এখানে আপনারা বিষয়টার আগা মাথা না জেনে পানি ঘোলা করতে চাচ্ছেন। এটা কখনো ঠিক হবেনা। যারা উপস্থিত ছিল তাদের সাথে কথা বলুন। মূল বিষয় জানুন। স্যার ঐদিন যা করেছে যা বলেছে তা ১০০% ঠিক করেছে ঠিক বলেছে আল কোরআনের চেয়ারম্যান হিসেবে।
সোহরাব উদ্দিন লেখেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন বিভাগের একজন শিক্ষক কর্তৃক এক ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় অপমান করা একদম অগ্রহণযোগ্য। একজন শিক্ষক হয়ে এমন আচরণ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানকে কলুষিত করেছে।
তিনি আরও লেখেন, খুনের বিচার চাওয়া ছাত্রদের আন্দোলনকে ছোট করে বিভাগের সুনাম রক্ষার নামে এমন ভাষা ব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝি বলেন, “সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি আল-কুর আন বিভাগের সভাপতি হিসেবে শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহর জন্য বিভাগের ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি। আমার অফিসে বসেই কেইছ এন্ট্রি করেছি। প্রশাসনিক ভাবে বিষয়টি কে এগিয়ে নিতে ভিসি প্রোভিসি, ইবি থানার ওসি সহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক সহ আমার আরেক জন ছাত্রের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার অসাবধানতাবশত কিছু শব্দচয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”
অন্যদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে এবং সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।



