

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকায় থাকা ৩০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩৩জন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এদিকে বরখাস্ত কিছু শিক্ষকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে ফ্যাসিস্টদের ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় চায় না বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) ইবি শাখা
ও জিয়া পরিষদ।
এতে জুলাই বিরোধীদের বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ও নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তির আওতায় না আসে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি রাখার দাবি জানান তারা।
জানা যায়, গত ১৫ মার্চ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। পরে প্রত্যক্ষদর্শী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী ও নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায় কমিটি।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১ তম সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তে ৩০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।
ফ্যাসিস্টের বিষয়ে জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান বলেন, আমাদের ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষক সংগঠন ফ্যাসিবাদী বোর্ড তৈরি করার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু জামাতপন্থী যারা আছে, ছাত্র-শিক্ষক সংগঠনগুলো কোন প্রতিবাদ করেনি। যারা ফ্যাসিস্ট তারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের মতো সেনসিটিভ জায়গায় বসে আমাদের লোকদের প্রমোশন আটকে দেয়, তাহলে আমরা কিভাবে এই বৈষম্যের পক্ষে কথা বলতে পারি?
তিনি বলেন, এই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তির পক্ষে দায়িত্ব পালন করতে আসছে ভাইস চ্যান্সেলর স্যার। তাকে সমস্ত জিনিস আমরা বলেছি, আমরা রেজিস্ট্রারকে বলেছি, আমরা সব জায়গায় সবসময় এই কথাগুলো বলে আসতেছি। তারপরে যদি সমাধান না হয়, আমরা কি করতে পারি?
আরও পড়ুনঃ নালিতাবাড়ীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে তালাবদ্ধ ঘর, থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্ত
বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা বিরোধিতা করেছে এবং আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়েছে, নানান ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এতে যেন কোনো নিরপরাধ লোকজন আবার শাস্তির আওতায় না আসে সেদিকে প্রশাসনের খেয়াল রাখা উচিত।
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বহিষ্কৃত বিভিন্ন শিক্ষকের পক্ষে আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটা শিক্ষকেরই তো ছাত্র থাকে, ভক্তবৃন্দ থাকে, তারা হয়তো সেই শিক্ষক অন্যায়কারী হোক বা ন্যায় হোক, তার পক্ষেই তারা অবস্থান নেয়। সুতরাং এইটাতে কান দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় তো যাচাই-বাছাই করেই শাস্তির আওতায় এনেছে। নিশ্চয়ই কোনো নিরাপরাধী কাউকে শাস্তির মধ্যে নিয়ে আসবে না।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিরোধী বিতর্কিত ভূমিকার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আরো একটি কমিটি গঠন করবো। সেই কমিটি বিবেচনা করবে কাকে কতটুকু শাস্তি দেয়া যায়। তবে ফ্যাসিস্টের প্রশ্নে কোন ছাড় হবে না।'