
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নেতৃবৃন্দরা মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় সাজিদ হত্যায় জড়িতদের আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে গ্রেফতার করতে না পারলে ভিসি কার্যালয় ঘেরার হুঁশিয়ারি দেন তারা। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেলার সাড়ে এগারোটার দিকে প্রশাসন ভবন চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আজকে ৪ মাস ২৫দিন বিচার হবে কবে?, এখনো আবেগী হবো না?, সাজিদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ কই?, তদন্ত ঠিক কতদূর?, ১৪৫ তম দিনেও কি প্রশাসনের টনক নড়ে না?, স্যার প্লিজ সন্তান ডাইকেন না, ভাইয়ের লাশ কবরে খুনি কেনো বাহিরে? শিক্ষার্থীরা আপদ, খুনিরা নিরাপদ! ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে শিক্ষকনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন, ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন এবং সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, গ্রীন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
এসময় প্রফেসর ড. রশিদুজ্জামান, প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আব্দুল কাদের, প্রফেসর ড. কামরুল হাসান, প্রফেসর ড. গফুর গাজী, প্রফেসর ড. এটিএম মিজানুর রহমান, প্রফেসর ড. হাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. মঈনুল হক, প্রফেসর ড.আব্দুর রাজ্জাক, প্রফেসর ড. জালাল উদ্দীন, প্রফেসর ড. আব্দুল মুমীন।
এছাড়া শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব, সদস্য রাফিজ,নুর উদ্দীন, রনি হোসেন, শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার আহ্বায়ক এস এম সুইট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল রাহাত, তলাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: শামীমসহ প্রমুখ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ‘সাজিদ হত্যার বিচার চেয়ে এ পর্যন্ত বহু কথা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলের সবাই মিলে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন খুনিদেরকে গ্রেপ্তার করতে না পারে আমরা ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করব। পাশাপাশি ১৪ই ডিসেম্বর আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে কেন্দ্রীয় মসজিদে সাজিদের রুহের মাগফিরাত কামনায় আমরা দোয়া আয়োজন করব।’
শাখা শিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, ‘সাজিদ হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ শিক্ষকবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ আমরা যেহেতু ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, সাজিদের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে প্রমাণ হয়েছে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কোন জুজুর ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন সাজিদের খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না? এর জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে। অন্যথায় প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখাতে আমরা বাধ্য হব।
প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আজকে অত্যন্ত হৃদয় ভারাক্রান্ত নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের এটা প্রত্যাশা ছিল না যে একজন ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবারও আমাদেরকে মানববন্ধন নিয়ে দাঁড়িয়ে এখানে বক্তব্য রাখতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই, আপনাদের জায়গা থেকে যা করণীয় অতি দ্রুততার সাথে এই বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান করুন।’
আরও পড়ুনঃ স্বাতন্ত্র্যে ফেরার চেষ্টা ইবির আল ফিকহ্ এন্ড ল’ বিভাগ
প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘যে ফ্যাসিস্ট আমরা বিতারণ করলাম। সেই ফ্যাসিস্ট আমলেও দিনে-দুপুরে ক্যাম্পাসের ভিতরে এধরণের খুন কিন্তু হতে পারে নাই। আমরা সোচ্চার ছিলাম। এর আগে দুটি গুম হয়েছিল—অলিউল্লাহ, মোকাদ্দাস। তাদের জন্য আমরা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেছি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হতো তাহলে অবশ্যই এর বিচার আমরা আদায় করে নিতে পারতাম, সেই অবস্থা আমাদের ছিল। অনতিবিলম্বে এই সাজিদের হত্যাকারীর বিচার হোক এবং যারা এর সাথে জড়িত তারা গ্রেফতার হোক।’
প্রফেসর ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যাকাণ্ড আজ থেকে ১৪৫ দিন আগে ঘটেছে। অদ্যাবধি দৃশ্যমান কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনো আমাদের চোখে পড়েনি। আমি মনে করি, ইচ্ছাকৃতভাবে এটিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং প্রশাসন ব্যর্থ এই বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তার ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে হবে প্রশাসনকে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই তদন্ত কার্যক্রমে যারা আইডেন্টিফাইড হয়েছে, তাদের নাম প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো গড়িমসি করে—আগামীতে শিক্ষার্থীদের এই সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডসহ যেকোনো ন্যায্য দাবির সাথে সম্পৃক্ত থাকবো এবং ঐক্যমত পোষণ করব।’
প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘আমি সাজিদ হত্যার ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিতে ছিলাম এবং আমার কমিটি দ্রুতই ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট দিতে সক্ষম হই। যত দ্রুততার সঙ্গে আমাদেরকে এই কাজটি করতে বলা হয়েছিল, সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচারও তত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আজকে ১৭ তারিখে সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যার ৬ মাস হয়ে যাবে। খুনিদেরকে চিহ্নিত করতে তো কোনো সংস্থার এত দেরি হওয়ার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব তাদেরকে অন্ততপক্ষে জনসমক্ষে নিয়ে এসে তাদের চরিত্রও সাধারণ ছাত্রদের ছাত্রীর সামনে উন্মোচন করা হোক। যতদিন পর্যন্ত সাজিদ হত্যার বিচার হবে না ও খুনিরা গ্রেফতার হবে না ততদিন ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমি যুক্ত থাকব।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ই জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ৩রা আগস্ট ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধে সাজিদের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়। এই ঘটনার পর থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতসহ সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।



