নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি এবং দাবি মেনে না নিলে ৭ জুলাই থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবে কর্মকর্তারাও। ফলে নতুনভাবে সেশনজটের শংঙ্কার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নোবিপ্রবি।
করোনাকালীন ধাক্কার পর, বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন, তাপদাহের বন্ধ, ঘুর্ণিঝড় সহ আরো কিছু কারণে সেশনজটের প্রায় দেড় বছরের একটা সেশনজট তেরী হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলে ব্যাঘাত ঘটবে পড়াশোনায় সাথে রয়েছে সেশনজট ও চাকরির পরীক্ষায় বিলম্বজনিত নানা সমস্যা। যার ফলে সেশনজট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সকল শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের সর্বাত্মক এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হলের সহ সভাপতি মেহরাব মজুমদার জানান, করোনার পরবর্তী সময়ে অনেকটা গতিশীল হয়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। সকল ধারাবাহিক কার্যক্রম এখন চলমান। কিন্তু গত ১৩ মার্চ ২০২৪ জারিকৃত প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন করছে এবং পহেলা জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশন জটের শঙ্কায় রয়েছে। ক্লাস, সিটিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পড়াশোনায় আবার ও একটা বড় রকমের ধাক্কা আসতে পারে। যা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণ ও ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখবে। তাই আমরা চাই খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হোক এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকুক,যাতে শিক্ষার্থীরা কোন ভাবেই পিছিয়ে না পড়ে।
ফার্মেসি ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম নাবিলা বলেন, এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকলে সেশন জট তৈরি হবে। এর ফলে ভোগান্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পাবে। আশা করছি শিক্ষকদের এই দাবি সরকার দ্রুত মেনে নেবে এবং শিক্ষক- শিক্ষার্থী সবাইকে দ্রুত ক্লাসে ফেরার সুযোগ করে দেবে।
চলমান সমস্যার সমাধান চেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়মা জাহান ঈশিতা জানান, সকল যৌক্তিক দিক ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলমান সমস্যার সময়োপযোগী সমাধান করে যাতে খুব দ্রুত আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অন্যথায়, অনির্দিষ্টকালের বন্ধের কারণে আমাদের লেখাপড়ায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিবে। আমরা যারা এখনও অনার্স শেষ করতে পারি নি আমাদের জন্য আরও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাস, সিটি হবে না যার কারণে আমরা আরো পিছিয়ে যাবো।
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা পোষণ করি করছি কারণ তাদের এই প্রত্যয় স্কিমের আওতায় আনা হলে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সাথে শিক্ষার্থীরা জড়িত,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের সকল ধরনের ক্লাস -পরিক্ষা বর্জনের ফলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে পারে। এবং বিশেষ করে যাদের শেষ বর্ষ /৮ম সেমিষ্টার চলমান তারা খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়বে।আগামী নভেম্বরে বিসিএস সার্কুলার এবং বিভিন্ন চাকরি পরিক্ষার সার্কুলার আসবে, ফলে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেনা। এদিক থেকেও ১ বছর পিছিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।সরকারের উচিত এসব বিষয় বিবেচনা করে একটা শিক্ষকবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া।
১৭ তম ব্যাচের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো: মেহেদী বলেন, ক্লাস, পরীক্ষা এবং গবেষণার কাজ স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। যার ফলে সেশন জটের মতো সমস্যা দেখা দিবে।এবং আমাদের স্নাতক হওয়ার সময়সীমা বিলম্বিত হতে পারে। অনিশ্চয়তা এবং শিক্ষাজীবনের ব্যাঘাত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বাড়াবে।
আরও পড়ুনঃ ববিতে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার আন্দলনে মারামারি, আহত ৫
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. বিপ্লব মল্লিক বলেন, আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি শুধুমাত্র আমাদের কথা চিন্তা করে নয় বরং আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে তারা যাতে এসব সুযোগ -সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় পাশাপাশি শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে যাতে তারা অনুপ্রাণিত হয়। সর্বাত্মক কর্মবিরতি র ফলে শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সে জন্য আমরা কম্প্রেহেনসিভ কিছু প্লানিং নিয়েছি যাতে প্রতিষ্ঠান খোলার সাথে সাথে তাদের যে গ্যাপগুলো হয়েছে সেগুলো পূরণ করা যায়। আমরা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে নই। শিক্ষার্থীদের যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় সেই দিক বিবেচনায় নিয়েই আমরা সকল ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। খুব শীঘ্রই আমাদের এই আন্দোলনের একটা সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী এবং আমরা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড.আনিসুজ্জামান রিমন বলেন,আজকের এই আন্দোলন আমাদের পেশার অস্তিত্বের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আজকের এই আন্দোলন যদি সফল হয় তবে আমাদের শিক্ষার্থীরাও এর সুফল ভোগ করবে।আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছি কর্মবিরতির কারণে সাময়িক ক্লাস পরীক্ষায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যাটি আমাদের শিক্ষকরা আন্তরিকর সাথে কিছু অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করবেন। যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না হয় তৈরি সে বিষয়টিও মাথায় রাখবেন আমাদের শিক্ষকরা”
উল্লেখ্য যে, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে ১লা জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়াও ৭ই জুলাই থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবে কর্মকর্তা সমিতিও।