মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, জাবি প্রতিনিধিঃ সরকারি চাকরিতে কোটা প্রত্যাহর করে ১৮’র পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে কোটা বিরোধী মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয় এবং মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা সেখানে মানববন্ধন পালন করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবি জানান।
তাদের অন্যান্য দাবীগুলো হলো- ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, আজকে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বলা হচ্ছে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যদি আজকে ৭১ এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো তাহলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরাই যুদ্ধ অংশ নিতো৷ অপরদিকে যারা কোটা নামক বিশেষ সুবিধার সিড়ি ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারাই রাজাকার আল-বদরের ভূমিকায় থাকতো।
মানব বন্ধনে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, একটা দেশের বিচারবিভাগ মানুষের আশা ভরসার প্রতীক। কিন্ত আদালতের সিদ্ধান্ত যখন জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায় তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই বিক্ষোভ আন্দোলন করবে। কিন্তু কোটাবিরোধী তথা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কটাক্ষ করা মূলত আমলাতন্ত্রের ধৃষ্টতার প্রমাণ দেয়। কোটা দিয়ে তারা যে বৈষম্যের সৃষ্টি করছে সেই বৈষম্য বহাল রাখতে তারা বদ্ধ পরিকর।
তিনি আরো বলেন, আজকে যারা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে বলছেন আন্দোলন করে কোটা বাতিল করা যাবে তাদের জানা থাকা উচিত বাংলাদেশের সৃষ্টিই হয়েছিল গণ আন্দোলনের মাধ্যমে। আমরাও আমাদের প্রাণে দাবি, অস্তিত্বের দাবি আদায় না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আরও পড়ুনঃ বরগুনার আমতলীতে ২কেজি গাঁজাসহ আটক-২
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাহীন বলায় সমালোচনা করে ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, যারা বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের নেই তাদের স্পষ্ট জানাতে চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা করি। যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে ব্যবহার করছে তারাই বরং চেতনাহীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এবারেও আছে থাকবে।
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণাকালে তিনি বলেন, আগামী রবিবার বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুশিয়ারি দেন।
এসময় তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ’সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। আমরা আদালতের প্রতি সম্মান রেখে বলছি আদালত আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে।আমরা বলতে চাই অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’