মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হলের চার কর্মচারীকে ছাত্রলীগের জোগসাজশে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে চাকরী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু এবং হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের অভিযুক্তরা হলেন: শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফাত ইসলাম বিজয়, সহ-সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী রাতুল রায় ধ্রুব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বখতিয়ার ফাহিম ত্বকী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ঐ ব্যাচেরই শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব সাদী, উপ-ত্রাণ ও ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলা বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিমাদ্রি সাহা জয়, আইন ও বিচার বিভাগের ঐ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আকিব শাহরিয়ার সিজান সহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই মাস আগে শহীদ সালাম-বরকত হলে চারজন কর্মচারী নিয়োগ পায়। তাদের মধ্যে একজন পিয়ন, একজন মালি, একজন ঝাড়ুদার এবং আরেকজন সুইপার। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে হল প্রভোস্ট এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমঝোতা হয় যে, চারটি নিয়োগের মধ্যে পিয়ন ও মালি দিবে বিজয় সহ হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং ঝাড়ুদার ও সুইপার নিয়োগ দিবে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু। হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নতুন যোগদানকৃত পিয়ন ও মালির নিকট হতে ১৮ থেকে ২২ লাখ টাকা এবং হল প্রভোস্ট ঝাড়ুদার ও সুইপারের নিকট হতে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা, ৫কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ
সংশ্লিষ্ট হল সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি বাসার কাজ হলের একাধিক বাবুর্চিকে দিয়ে কারিয়ে নেন। রাতে হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় একজন গার্ড দিয়ে নিজ বাসায় একাধিক গার্ড ব্যবহার করেন। হলের ডাইনিংয়ে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুনদের চাকরি দিয়েছেন তিনি।
পরপর তিন সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হলেও হল থেকে অছাত্রদের বের করতে ছিল না তার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। বরং তিনি হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগের অছাত্রদের সাথে আলোচনা করে কাজ করতেন। হলের কাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তার উদাসীনতা রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থের একটা অংশ দিয়ে হল ছাত্রলীগ কর্মীদের কক্সবাজারে পাঁচ দিনের ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ইসলাম বিজয় বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। অন্য নেতাকর্মীরা নিতে পারে।
শাখা ছাত্রলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক নাজমুস সাকিব সাদী বলেন, ছাত্রলীগের সাথে বেশ কিছুদিন আমার তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে আমি শুনেছিলাম হলে চারটা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে যার দুইটা ছাত্রলীগ পাচ্ছে বাকি দুইটা হল প্রশাসন নিচ্ছে। তবে এ নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। হলের সিনিয়র নেতারাই এগুলোর খোঁজ রাখতো।
আরও পড়ুনঃ বৃহস্পতিবারের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিলে পুলিশরা চাকরি হারাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু বলেন, কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হলের কোনো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সাথে আমার কোন সমঝোতা হয়নি। কিন্তু হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে আমাকে চাপ দেয়। তবে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। তিনি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
হলের কর্মচারী দিয়ে বাসার কাজ করার বিষয় তিনি বলেন, আমার হলে যে বাবুর্চি কাজ করত, সকালের দিকে তার পারিবারিক সমস্যা থাকায় আমি অন্য একজন বাবুর্চিকে দিয়ে কাজ করিয়েছি এটা সত্য। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে, আমি কোনো কর্মচারীকে দিয়ে কাজ করাইনি।