তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ফের সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শেষ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগ। ফলে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তানসহ নানা কারণে হতাশায় ভুগছেন এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা না নেয়া, পরীক্ষার তারিখ পেছানো, ফল প্রকাশে কচ্ছপগতি, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ নানা কারণে এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, করোনার প্রভাবে যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছিলো তা অনেক বিভাগই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এদিকে সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও ছাত্র আন্দোলনের জেরে টানা দুই মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম।
তথ্য মতে, গেল জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্তর্ভূক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষকরা। জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও একই কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে। পরে ১৮ জুলাই থেকে অসহিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতায় পুরো শিক্ষা সূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় ১৬ জুলাই সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পরে একে একে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ অন্তত ১২জন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি পদত্যাগ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনর কার্যত পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। এদিকে ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পাঁচ পদ শূন্য থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সেশনজট নিরসনে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। বিভাগের শিক্ষকরা যেহেতু স্বপদে বহাল রয়েছেন, তারা চাইলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে পারেন। এ ছাড়া দ্রুত সৎ ও যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই আমাদের বিভাগে জট আছে। তার উপর চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন না, বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন। এতে প্রায় দুই বছরের জটে পড়তে যাচ্ছি। যার কারণে ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে ৭ বছরও লাগতে পারে। তাই আমি অভ্যন্তরীণ ভাবে বিভাগের যে কাজগুলো করা সম্ভব সেগুলো করা ও অতি দ্রুত আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুনঃ টাঙ্গাইলে এক গৃহবধূ হলেন একসঙ্গে চার ছেলের জননী
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, পরিবার যে আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে, শিক্ষকদের অবহেলায় তার জলাঞ্জলী দিতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও নানা অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষকরা ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছেন না। বাড়িতে গেলে লজ্জায় বলতে পারি না আমি এখনো ১ম বর্ষে পড়ে আছি। অথচ আমার থাকার কথা ৩য় বর্ষে। তাই যেকোনো মূল্যে সেশনজট নিরসনে বিভাগের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এছাড়া সম্প্রতি বাংলা বিভাগ, আইন বিভাগ ও ইংরেজি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দ্রুত সেশনজট নিরসনসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। শিক্ষকরা যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে গত ২৪ আগস্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন'স কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান ডীনরা।