মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সবার নজর কেড়েছে। নিজেদের ব্যবহৃত পুরোনো বইগুলো বিক্রি করে বন্যার্তদের সহায়তা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। এই উদ্যোগ শুধুমাত্র সহানুভূতি বা দানের উদাহরণ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববোধ এবং সমাজের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে। নিজেদের পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যস্ত সময়ের মাঝেও তারা যে মানবিকতা এবং সহমর্মিতার নজির স্থাপন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকাল দশটার দিকে রাজশাহী কলেজের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনে গেলে এক বিশেষ দৃশ্য দেখা যায়। যেখানে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে তাদের পুরোনো বইগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কম দামে এই বইগুলো কিনছে, আর বিক্রিত অর্থ সরাসরি বন্যার্তদের সহায়তায় ব্যবহার করা হবে। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা ঐক্য, মানবিকতা, এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের নিদর্শন।
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মাশরাফি জানান, এই উদ্যোগের পেছনে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বন্ধুদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাবকে কাজে লাগানো। দূরবর্তী নওগাঁ থেকেও কিছু শিক্ষার্থী বই জমা দিয়েছে, এখান থেকে প্রমাণ করে এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য দূরত্ব কোনো বাধা নয়। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পিস বই সংগ্রহ করতে পেরেছেন, যা বিক্রি করে ইতিমধ্যে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা উঠেছে। মাশরাফি আশাবাদী, দিন শেষে তারা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বই বিক্রি করতে পারবেন।
দ্বাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মেহেনাজ ঐশী বলেন, তারা ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হলেও, দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে পরীক্ষার প্রস্তুতির চেয়েও জরুরি ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের পরিকল্পনা ছিল রাজশাহী নগরীর সোনাদিঘির মোড়ে বইগুলো বিক্রি করার, তবে তারা সিদ্ধান্ত নেয় সেগুলো ছোট ভাই-বোনদের কাছে বিক্রি করবে। এর মাধ্যমে দুই পক্ষই উপকৃত হবে-একদিকে শিক্ষার্থীরা কম দামে প্রয়োজনীয় বই পাবে, অন্যদিকে বন্যার্তদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ হবে। এই পরিকল্পনা তাদের মানবিকতার পাশাপাশি কৌশলগত চিন্তা।
রাজশাহী কলেজ একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও বই ক্রেতা মোহাম্মদ আলভী এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমি যে টাকা দিয়ে বই কিনছি, সেই টাকা বন্যার্তদের সহযোগিতায় ব্যয় হবে। একইসঙ্গে, আমি কম দামে বইও পাচ্ছি। এতে আমিও উপকৃত হচ্ছি, এবং বন্যার্তদেরও সাহায্য হচ্ছে। এখানে আমরা ৬০ শতাংশ ছাড়ে পুরোনো বইগুলো কিনতে পারছি।” আলভী জানান, এই উদ্যোগ কেবলমাত্র একটি দানশীল প্রকল্প নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া যেখানে উভয়পক্ষই লাভবান হচ্ছে। এটি একটি সফল এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুনঃ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিতে লাগবে দলের ঊর্ধ্বতনের অনুমতি
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের এই মানবিক উদ্যোগটি শুধু বন্যার্তদের সহায়তার জন্যই নয়, বরং সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ এবং সহানুভূতিরও প্রমাণ। এটি আমাদের শেখায়, সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে বয়স কোনো বাধা নয়। এই শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট নয়; তারা সামাজিক দায়িত্ববোধের ব্যাপারে সমান সচেতন। তাদের এই উদ্যোগ অন্যদেরও উৎসাহিত করবে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং সহানুভূতির মনোভাব জাগ্রত করতে এমনটাই মন্তব্য করেন রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ ইব্রাহিম আলী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই মানবিক উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা যে সহানুভূতি এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে, তা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজের প্রতি তাদের গভীর অঙ্গীকারেরই প্রমাণ। আমি তাদের এই প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই এবং আশা করি, তারা ভবিষ্যতেও সমাজের কল্যাণে এভাবে কাজ করে যাবে।