মো: আলিফ হোসাইন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ অপরাধ বিজ্ঞান (Criminology) অপরাধ, অপরাধী, এবং অপরাধ প্রতিরোধের কাঠামো নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি আন্তঃবিভাগীয় শাস্ত্র। এটি অপরাধের কারণ, প্রকৃতি এবং এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের পুনর্বাসন এবং অপরাধ প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণে সহায়ক। বাংলাদেশসহ বহিঃবিশ্বের প্রেক্ষাপটে অপরাধ বিজ্ঞানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আজকের এই বিস্তারিত আলোচনা।
অপরাধ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্যঃ
১. সংজ্ঞা: অপরাধ বিজ্ঞান এমন একটি শাস্ত্র যা অপরাধের কারণ, প্রভাব এবং সমাধান সম্পর্কিত গবেষণা করে। এটি সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, আইন, এবং অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
অপরাধের কারণ চিহ্নিতকরণ: অপরাধী কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকা সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও মানসিক কারণ বিশ্লেষণ।
প্রতিরোধ কৌশল: কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন।
পুনর্বাসন: অপরাধীদের সমাজে পুনর্গঠনের উপায়।
সামাজিক ন্যায়বিচার: ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
তাত্ত্বিক কাঠামো
১. ক্লাসিকাল তত্ত্ব (Classical Theory): প্রতিনিধি সিজার বেকারিয়া (Cesare Beccaria)। শাস্তি অপরাধ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। ২. ইতিবাচক তত্ত্ব (Positivist Theory): সিজার লোমব্রোসোর (Cesare Lombroso) মতে অপরাধীরা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে অপরাধপ্রবণ হতে পারে। ৩. সামাজিক তত্ত্ব (Social Theory): এমিল দুরখাইমের (Émile Durkheim) মতে অপরাধ সমাজের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ৪. স্ট্রেইন থিওরি (Strain Theory): রবার্ট মারটনের (Robert K. Merton) মতে সামাজিক বৈষম্য অপরাধের কারণ। ৫. লেবেলিং তত্ত্ব (Labeling Theory): হাওয়ার্ড বেকার (Howard Becker) বলেছেন, অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তির অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে অপরাধ বিজ্ঞান
১. প্রাসঙ্গিকতা: অপরাধ বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সীমিত। মাদক, সাইবার অপরাধ, এবং নারী নির্যাতন বড় সমস্যা। ২. চ্যালেঞ্জ: প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, অপর্যাপ্ত গবেষণা, এবং অপরাধী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অভাব। ৩. উদাহরণ: মাদক চোরাচালান রোধে অপরাধ বিজ্ঞানের ব্যবহার অপরিহার্য। সাইবার অপরাধও বাড়ছে। ৪. প্রস্তাবনা: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাড়ানো, ফরেনসিক ব্যবস্থার উন্নতি, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান।
বহিঃবিশ্বে অপরাধ বিজ্ঞানঃ
১. যুক্তরাষ্ট্র: FBI অপরাধ দমনে অপরাধ বিজ্ঞানের ব্যবহার করে। 2. যুক্তরাজ্য: ফরেনসিক বিজ্ঞান ও সিসিটিভি প্রযুক্তি অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ। 3. জাপান: অপরাধী পুনর্বাসনে জাপানের সামাজিক উদ্যোগ প্রশংসিত।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চাপায় সাইকেল আরোহীর মৃ’ত্যু
প্রযুক্তির ব্যবহার:
ডিএনএ প্রোফাইলিং: অপরাধ সমাধানে অপরিহার্য।
সাইবার ক্রাইম অ্যানালিটিক্স: ইন্টারনেট নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি।
ব্যবহারিক প্রয়োগ, ১. আইন প্রয়োগ: অপরাধের কারণ বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত শাস্তি। ২. পুনর্বাসন: মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও প্রশিক্ষণ। ৩. সামাজিক ন্যায়বিচার: ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষা।
অপরাধ বিজ্ঞান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা সমাজে অপরাধ দমন এবং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে অপরাধ বিজ্ঞানের গবেষণা এবং প্রয়োগের উন্নতি অপরিহার্য। উন্নত বিশ্বের উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলাদেশেও অপরাধ বিজ্ঞানকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিস্তৃত করতে হবে, যাতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলা বজায় থাকে।