spot_img

― Advertisement ―

spot_img

মধুপুরে বাস-মাহিন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জনের মৃত্যু

বাবুল রানা, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাস ও মাহিন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে দুই বন্ধুর। নিহতরা হলেন মাহিন্দ্র চালক ফরহাদ ও তার বন্ধু...
প্রচ্ছদফিচারফাগুন মানে নতুনের বার্তা, ফাগুন মানে রঙের ছোঁয়া

ফাগুন মানে নতুনের বার্তা, ফাগুন মানে রঙের ছোঁয়া

বাংলা বর্ষপঞ্জির এক বিশেষ দিন, ১লা ফাগুন, বসন্তের প্রথম দিন। শীতের জড়তা কাটিয়ে প্রকৃতি যখন নবজীবনে জেগে ওঠে, তখনই আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ফাল্গুনের মৃদুমন্দ বাতাস, গাছে গাছে নতুন কুঁড়ি আর পাখির কলকাকলিতে চারপাশ ভরে ওঠে।

কবির ভাষায়, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’। একই সঙ্গে ১লা ফাল্গুন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, যা পহেলা ফাল্গুনের আবেগ, অনুভূতি ও উচ্ছ্বাসের রঙে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। বাংলার প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। তাই ঋতুরাজ বসন্তকে বলা হয় প্রেমের ঋতু। বাংলা ভাষার এমন কোনো কবি নাই যিনি বসন্ত নিয়ে দু-চার লাইন লিখেননি। এমন দিনে ভালোবাসা দিবস যুক্ত হওয়ায় সবার অন্তরে এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

ফাল্গুনের প্রথম দিন বাঙালির জীবনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহ্যগতভাবে, এই দিনটি আমরা পহেলা ফাল্গুন নামে উদযাপন করি, যা বসন্ত উৎসবের রঙিন আয়োজনের সূচনা। তরুণ-তরুণীরা বাসন্তী রঙের পোশাক পরে শহরজুড়ে ছড়িয়ে দেয় আনন্দের উচ্ছ্বাস। গানে, কবিতায়, আর ভালোবাসার উষ্ণতায় হৃদয় মেতে ওঠে। ১লা ফাগুন শুধু প্রকৃতির নয়, এটি বাঙালির ইতিহাসেরও অংশ। একুশের চেতনার আগমনী সুর বয়ে আনে বসন্তের এই দিনটি। একদিকে প্রেম ও উল্লাস, অন্যদিকে একুশের তেজোদীপ্ত স্মৃতি—ফাল্গুনের আবহে সবকিছু যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পহেলা বৈশাখের পর পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব বাঙালি সংস্কৃতিতে এক সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, কোকিলের কুহুতান, মৌমাছি আর ভ্রমরের গুঞ্জরন, সোনালি রোদের মিষ্টি ছোঁয়া মানব মনকে উদাস করে দেয়। এই দিনে বাংলদেশের প্রতিটি নগরে, বন্দরে, শহরে, গ্রামে- সব বয়সের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে, আবেগের উন্মাদনায় মেতে ওঠে। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, খোঁপায় নানা রঙের ফুল গুঁজে আর তরুণেরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পরে সুসজ্জিত ও সুশোভিত হয়ে উচ্ছ্বসিত মনে পথে- প্রান্তরে সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে কবিগুরুর সেই গান, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…’

বসন্তের আগমনে বাংলার প্রকৃতি যেন বর্ণিল রুপ ধারণ করে। গাছে গাছে পলাশ, শিমুল । শুকনো পাতা ঝরে পড়ে ডালে ডালে জন্ম নেয় কোমল-রঙিন কচিপাতা। শুষ্ক মাটির রুক্ষতা ভেদ করে মাঠে মাঠে গজায় কোমল-মসৃন সবুজ দূর্বাঘাস। বইতে শুরু করে ফাগুনের মৃদু-মন্দ দক্ষিণা হাওয়া। বসন্তের রূপ ও মোহে মুগ্ধ হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায়, ফাল্গুনী মোর মন বনে’।

আরও পড়ুনঃ ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

পাশাপাশি ১ লা ফাল্গুন ভালোবাসা দিবস হিসাবে পালিত হয়। ভালোবাসা এমন এক আবেগময় মানবিক অনুভূতি, যা জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, সাহসী হতে শক্তি জোগায়, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে তোলে। ভালোবাসা মনের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে এবং ভাবনার জগৎকে প্রসারিত করে। কল্পনায় সে মেঘের সঙ্গে বিহঙ্গের মতো ভেসে বেড়ায় এবং অনন্ত এক সৌন্দর্যলোকে অবগাহন করে। 

নতুন সূর্যের আলোয়, নতুন আশায়—ফাল্গুন আসুক আমাদের জীবনে নবজাগরণের বার্তা নিয়ে!কোনো অমিতাচার কিংবা বিশৃঙ্খলা নয়, মানবকল্যাণ, মানবপ্রেম তথা মানুষের প্রতি ভালোবাসাই হোক পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের মূল অঙ্গীকার। 

লেখক : রবিউস সানি জোহা 
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম , ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।