ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে (Valentine’s Day) প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। এই দিনটিকে ভালোবাসার দিন হিসেবে ধরা হয় এবং বিশেষ করে প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীরা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকেন। তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) কেবল রোমান্টিক ভালোবাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য, এমনকি সমাজের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও অনেকে উদযাপন করে।
ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডের ইতিহাস ও উৎপত্তি
ভ্যালেন্টাইন্স ডের উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনীটি হলো সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজকের প্রতি নিবদ্ধ।
প্রাচীন রোমান ইতিহাস: ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস II ঘোষণা করেছিলেন, তরুণ পুরুষদের বিবাহ করা নিষিদ্ধ। কারণ তিনি মনে করতেন, অবিবাহিত সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এই আদেশের বিরোধিতা করে গোপনে তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ে দেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে সম্রাট ক্লডিয়াস তাকে গ্রেফতার করেন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। মৃত্যুর আগে তিনি কারারক্ষীর মেয়েকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি শেষ লাইনে লিখেছিলেন "From Your Valentine"—যা আজকের দিনে জনপ্রিয় এক বাক্য হয়ে উঠেছে।
মধ্যযুগে জনপ্রিয়তা: মধ্যযুগে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) ভালোবাসার দিন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৪০০ শতকে কবি জিওফ্রে চসার (Geoffrey Chaucer) তার কবিতায় প্রথমবারের মতো ভালোবাসার সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন্স ডের সম্পর্ক স্থাপন করেন।
আধুনিক ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) উদযাপনঃ বর্তমানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়, যদিও এর ধরন ও রীতিনীতি ভিন্ন হতে পারে।
১. উপহার বিনিময়: ফুল (বিশেষত লাল গোলাপ), চকোলেট, কার্ড, পারফিউম, জুয়েলারি ইত্যাদি উপহার দেওয়া হয়। অনেক প্রেমিক যুগল একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কাস্টমাইজড উপহারও তৈরি করে থাকে।
২. বিশেষ ডিনার ও ভ্রমণ: অনেকেই ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে বিশেষ ডিনারে যান বা বেড়াতে যান। রোমান্টিক ডেট, মুভি নাইট, সুর্যাস্ত দেখার পরিকল্পনাও করা হয়।
৩. সামাজিক মাধ্যম ও শুভেচ্ছা বিনিময়: ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোবাসার পোস্ট, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা জনপ্রিয় হয়েছে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক, টুইটারে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) কেবল রোমান্টিক ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি অন্যান্য সম্পর্কের প্রতিও ভালোবাসার দিন হিসেবে পালন করা যেতে পারে। পরিবারের ভালোবাসা: বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানী-নানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বন্ধুত্বের বন্ধন: বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। সামাজিক ভালোবাসা: দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো।
আরও পড়ুনঃ ফাগুন মানে নতুনের বার্তা, ফাগুন মানে রঙের ছোঁয়া
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) উদযাপন
বাংলাদেশে গত কয়েক দশক ধরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাস, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা থাকে বেশি। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠান এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশেষ অফার দেয়। কিছু অংশের মানুষ একে ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ বলে সমালোচনা করলেও, তরুণরা একে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করছে।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে(ভালোবাসা দিবস) ভালোবাসা প্রকাশের একটি প্রতীকী দিন। তবে প্রকৃত ভালোবাসা কেবল এক দিনের জন্য নয়, বরং প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে ভালোবাসার মানুষদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এটি যেন কেবল বাণিজ্যিকীকরণ বা বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং ভালোবাসা ও সম্মানের বার্তা ছড়িয়ে দেয়—সেটাই হওয়া উচিত এই দিনের মূল শিক্ষা।