spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদফিচারক্যাম্পাস ছেড়ে ঈদ যাত্রায় আপন নীড়ে: রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাস ছেড়ে ঈদ যাত্রায় আপন নীড়ে: রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ অফুরন্ত রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে বিদায়ের প্রহর গুনছে মাহে রমজান। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। রমজানের শেষ মুহূর্তগুলো জানান দিতে শুরু করেছে ঈদের আগমনী বার্তা। ঈদ মানে শুধু উৎসব নয়, ঈদ মানে শেকড়ের টানে ফিরে আসা, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত। রমজানের শেষ দিনগুলোর ব্যস্ততা ক্যাম্পাসের পড়াশোনা, ক্লাস, পরীক্ষা পেরিয়ে এবার বাড়ি ফেরার আনন্দে রূপ নিচ্ছে। শৈশবের স্মৃতিগুলোকে নতুন করে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য উপলক্ষ হয়ে উঠছে এই ঈদ যাত্রা।

কেমন লাগে শিক্ষার্থীদের এই নীড়ে ফেরা? ঈদ তাদের কাছে কী অর্থ বহন করে? দেশসেরা রাজশাহী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছেন।

“বাড়ি ফেরার অপেক্ষা ঈদের আনন্দকে আরও গভীর করে তোলে”

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোছাঃ রোকেয়া সুলতানা বলেন, “ক্যাম্পাসজীবন মানেই ক্লাস, পরীক্ষা আর নির্ঘুম রাত। রমজান মাসেও একই ব্যস্ততা থাকে। তবে ঈদের ছুটির ঘোষণা হলে ক্লান্তির জায়গায় আসে বাড়ি ফেরার আনন্দ। রমজানের শেষ দশ দিন থেকে ব্যাগ গোছানোর প্রস্তুতি, ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ, বাবা-মায়ের জন্য উপহার কেনা, ছোট ভাই-বোনের জন্য পোশাক কেনা—এসব মুহূর্ত ঈদের আনন্দকে আরও গভীর করে তোলে।”

তবে বাকিদের তুলনায় তার ঈদের সকালটা একটু ভিন্নভাবে শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই বাবা প্রবাসে, তাই ঈদের নামাজ শেষে বাবার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি। তবুও নতুন জামা, মেহেদির রঙ, বাহারি খাবার, সালামি সংগ্রহ—সব মিলিয়ে পরিবারের সাথে তার ঈদের দিন সত্যিকার অর্থে আনন্দময় হয়ে ওঠে। এবারের ঈদেও তার প্রত্যাশা, পরিবারের সাথে ঈদের খুশিতে সামিল হয়ে আনন্দকে উপভোগ করা।

“পরিবারের সঙ্গে ঈদ মানেই আনন্দের এক নতুন মাত্রা”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান মিন্টু বলেন, “পরিবার ছেড়ে ইফতারের সময়ে মা-বাবার কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধবদের সাথে ইফতার করলেও, পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের অনুভূতি আলাদা।”

তিনি বলেন, “এবার ঈদে পরিবারের সাথে মার্কেটে যাবো, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা হবে। এছাড়াও পরিকল্পনা আছে পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। সব মিলিয়ে ঈদ সুন্দর কাটবে বলে আশা করছি।”

“প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ফেরার আনন্দই ঈদের সবচেয়ে বড় পাওয়া”

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোছাঃ রাবেয়া খাতুন বলেন, “ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দ বয়ে আনে, তবে যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে, তারা এটি আরও বেশি অনুভব করে। পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনটা কাটিয়েছি হলের মায়াঘেরা আঙিনায়, যেখানে আমার স্বজনরা কেউ নেই। তবুও আশেপাশের চেনা পরিচিত মানুষগুলোর সঙ্গে বেশ আনন্দেই সময় কেটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “তবুও অপেক্ষায় থাকা ছুটির ঘণ্টা যেন প্রিয়জনদের কাছে ফেরার উচ্ছ্বাস হয়ে ওঠে। অবশেষে নাড়ির টানে ভোরের প্রথম ট্রেনের জানালার পাশে বসে স্নিগ্ধ বাতাসে নিজ নীড়ে ফেরার যাত্রা শুরু করি। পরিবারের সাথে ঈদের কেনাকাটায় এক অন্যরকম আনন্দ কাজ করে। আর পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় ঈদের দিনের সালামি পাওয়ার এক আলাদা অনুভূতি থাকে, মনে হয় যেন ছোটবেলায় ফিরে গেলাম। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ পরিবারের সঙ্গে ভালো কাটবে বলে আশা করছি।”

আরও পড়ুনঃ মাত্র ৫ টাকায় ঈদের খাবার: আনন্দে আপ্লুত রিকশাচালক রবিউল

“ঈদ মানেই ফেরা, আপনজনের মাঝে হারিয়ে যাওয়া”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, “রমজানের বেশিরভাগ সময় কাটে ক্যাম্পাসের ব্যস্ততায়, পরিবার থেকে দূরে। ইফতারের টেবিলে মায়ের হাতের রান্নার অভাব অনুভব করি, তারাবির পর বন্ধুদের সাথে আড্ডাগুলো মিস করি। তবে রোজার শেষের দিনগুলো এক অন্যরকম উত্তেজনা নিয়ে আসে—ফেরার অপেক্ষা, প্রিয় মুখগুলোর মাঝে ফিরে যাওয়ার আনন্দ।”

তিনি বলেন, “ছোটবেলার সেই নির্মল ঈদের উচ্ছ্বাস হয়তো নেই, তবে পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো এখন আরও মূল্যবান মনে হয়। সারাবছর এ সময়টার অপেক্ষায় থাকি, কারণ ঈদ মানেই ফেরার আনন্দ, আপনজনের স্পর্শ। ক্যাম্পাসের ব্যস্ততা, একাকীত্ব আর ক্লান্তির পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদের মুহূর্তগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান। ঈদের আনন্দ কখনো ফিকে হয় না, বরং প্রতি বছর নতুন করে হৃদয়কে আলোয় ভরিয়ে তোলে।”

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদ মানে শুধু আনন্দ নয়, বরং আপন নীড়ে ফেরার এক অপার অপেক্ষা। প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যাওয়ার এই যাত্রা যেন সবার জন্য সুখ ও শান্তির বার্তা বয়ে আনে—এটাই সবার প্রত্যাশা।