
মো: সাদিক ফাওয়াজ সামিন, বুটেক্স প্রতিনিধিঃ জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। ভেঙে পড়েছে স্বৈরাচারের মসনদ, নতুন করে জেগে উঠেছে গণতন্ত্রের স্বপ্ন। এই অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিল দেশের তরুণ প্রজন্ম, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। সামনে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তরুণ সমাজের প্রত্যাশা ও ভাবনা আজ জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নয়—এটি একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ও ন্যায়বিচারের লড়াই
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন একটি প্রজন্মের স্বপ্ন, অধিকার ও প্রত্যাশার প্রতিফলন। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনিয়ম, কেন্দ্র দখল ও বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এতে কোটি তরুণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্ম একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে, যা দেশকে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে নিতে পারে।
আমি চাই ভবিষ্যৎ সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে জনগণের স্বার্থে কাজ করুক এবং বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখুক। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের যথাযথ সম্মান ও বিচারের নিশ্চয়তাও জরুরি। আমার মতে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের জন্য যথার্থ সময়, যা প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুযোগ এনে দিতে পারে।
ওয়াজেদুল ইসলাম সিয়াম
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
জনবান্ধব সরকার-ই একমাত্র চাওয়া
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ও নিরপেক্ষ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্ষম হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার জনবান্ধব হতে হবে—যা নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, অর্থনৈতিক বাস্তবতা নির্ভর পরিকল্পনা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেবে। আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও জবাবদিহিতামূলক কাঠামো গড়া হবে অপরিহার্য। একই সঙ্গে, বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে মর্যাদার অবস্থানে পৌঁছাতে হবে।
আমি মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। তারা ইতোমধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু ১৬ বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় দরকার। এই সময় সংস্কার কার্যক্রম পূর্ণতা পাবে এবং একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি গড়ে উঠবে।
আদেল মাহমুদ
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
জুলাই বিপ্লব: স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা
জুলাই বিপ্লব ছিল স্বৈরাচারের পতনের ঘোষণাপত্র—একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন। এটি ছিল জনগণের সাহসিক প্রতিরোধ ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক অবস্থান। এই বিপ্লব শুধু একটি সরকারের পতন নয়, বরং অন্যায়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সার্বজনীন প্রতিবাদ ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এ প্রেরণা টিকবে না। ইতিহাস প্রমাণ করেছে—ভোটাধিকার হরণ করলে রাষ্ট্রযন্ত্র হয় স্বৈরশাসকের হাতিয়ার।
জনগণের সরকার হওয়া উচিত জনগণের সেবক, প্রভু নয়। অবাধ নির্বাচনই আনতে পারে জবাবদিহিতা, যা প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি করছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রয়োজন এখনই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ—যাতে দেশ ফিরে পায় গণতন্ত্রের শক্ত ভিত।
মোঃ হাসিবুর রহমান রাতুল
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুনঃ কুবিতে আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু
নির্বাচন হোক জবাবদিহিতার মঞ্চ
নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক নয়, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের প্রাণ। তরুণরা—যারা দেশের ৪০-৪৫ শতাংশ—জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তাই তারা আজকের নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যেন একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিটি ভোট সুরক্ষিত থাকবে এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত হবে।
নতুন সরকারকে অবশ্যই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমতের সম্মান ও দমন-পীড়নহীন বাংলাদেশ গড়াই তরুণদের প্রত্যাশা। সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে দেশরক্ষায় প্রস্তুত করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং তিস্তা নদীসহ পানিবণ্টনে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য সমঝোতা জরুরি। নির্ধারিত সময়সীমায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়াই এখন সময়ের দাবি।
আশির আল মাহিন
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।