মো: সাদিক ফাওয়াজ সামিন, বুটেক্স প্রতিনিধিঃ বিশ্ববিদ্যালয়জীবন অনেকের কাছেই জীবনের সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও সম্ভাবনাময় সময় হিসেবে বিবেচিত। উচ্চশিক্ষা, আত্ম-আবিষ্কার এবং পেশাগত প্রস্তুতির এই পর্বে শিক্ষার্থীরা অসীম স্বপ্ন বুনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবন যেমন স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় ভরা, তেমনি অদৃশ্য চাপ, দুঃচিন্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য সংকটও এর বাস্তবতা।
সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপের মতো সমস্যায় ভুগছে। প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার অভাব, সঠিক কাউন্সেলিং সেবা না পাওয়া এবং নীরবতার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে আত্মহত্যার মতো চরম ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের প্রবণতা। ঝরে পড়ছে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মের অনেক মেধাবী মুখ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কি ভাবনা ও অভিজ্ঞতা তাদের—
বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা মানেই জীবনের নতুন অধ্যায়—আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার যাত্রা। কিন্তু এই যাত্রাপথ সবসময় মসৃণ নয়। সেশনজট, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ হয়ে ওঠে অসহনীয়। অনেকে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে ফেলে আত্মবিশ্বাস, হয়ে পড়ে একা। বন্ধুদের ব্যস্ততা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্লিপ্ত পাঠ্যসূচি—সবকিছু মিলিয়ে হতাশা গভীর হয়। দুঃখজনকভাবে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীন। নেই কাউন্সেলিং সেবা, নেই সচেতনতামূলক সেশন। অথচ একটি মোটিভেশনাল কর্মশালা কিংবা একজন সহানুভূতিশীল পরামর্শকই বদলে দিতে পারে কারও জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। যেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেবল পরীক্ষার চাপ নয়, হয়ে ওঠে শেখার, বেড়ে ওঠার এবং নিরাপদভাবে মানুষ হয়ে ওঠার একটি মানবিক পথ।
ফারদিন বিন মনির
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবন তরুণদের জন্য যেমন উত্তেজনার, তেমনই মানসিক চ্যালেঞ্জে ভরা। নতুন শহর, অপরিচিত মুখ, একাডেমিক চাপ—সবকিছু মিলে অনেক শিক্ষার্থীরই শুরু হয় এক নিঃসঙ্গ ও বিভ্রান্তিকর অধ্যায়। একাকিত্ব, হোমসিকনেস আর ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবশত কেউ কেউ সহানুভূতিশীল রুমমেট বা সিনিয়রদের সহায়তায় ঘুরে দাঁড়ালেও, সবাই সেই সুযোগ পায় না।
বর্তমানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেবা থাকলেও, সচেতনতার অভাব ও অতিরিক্ত চাপের কারণে সেবাগুলো পর্যাপ্ত নয়। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিভাগে মেন্টর, নিয়মিত ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নিয়োগ ও একাডেমিক কারিকুলামে চাপ হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শুধু কাউন্সেলিং সেল দিয়ে নয়, প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি সহানুভূতিশীল ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।
সালমান আব্দুল্লাহ
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনঃ রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের পর এবার ছাত্রীনিবাসে চুরির অভিযোগ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হলেও, নতুন শহরে মানিয়ে নেওয়া হয়ে ওঠে বহু শিক্ষার্থীর নীরব সংগ্রাম। বিশেষ করে পরিবারনির্ভর ঘরকাতুরে তরুণ-তরুণীদের জন্য ঢাকার যান্ত্রিক জীবন এক মানসিক ধাক্কা হয়ে আসে। অপরিচিত পরিবেশ, একাকিত্ব ও পড়াশোনার চাপ অনেককে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। ক্লাসে মিশতে না পারা, মনোযোগে ঘাটতি এবং রেজাল্ট খারাপ হওয়া—সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অদৃশ্য সংকট।
তবে হলজীবন কিছু শিক্ষার্থীর জন্য হয়ে ওঠে নির্ভরতার আশ্রয়। সহপাঠী, সিনিয়রদের আন্তরিকতায় কেউ কেউ এই কঠিন বাস্তবতায় মানিয়ে নেয়। কিন্তু সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওরিয়েন্টেশন, পরিচিতিমূলক কর্মসূচি ও কাউন্সেলিং সেশন বাধ্যতামূলক করা দরকার। নতুন শহরে শিক্ষার্থীর অভিযোজন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে চাই সচেতন, সহানুভূতিশীল প্রশাসনিক উদ্যোগ।
দীপ্ত শর্মা
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।